“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” এমন কথা এখন কাল্পনিক বলেই মনে হয়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যদি মানুষের হৃদয়ে মায়া মমতা বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি না করতো তবে এসব কথা ইতিহাসের পাতায় আসত না। আর এ মূল্যবান কথাটির যথার্থ খুজে পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরের গবীরের ডাক্তারখ্যাত বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা. চিত্ত রঞ্জন দাসের জীবন আদর্শে। যার মৃত্যুতে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ। যিনি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে সি আর ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন।
গত ২০ জুন হঠাৎ বুক ব্যাথা দেখা দিলে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ করা হয়। যিনি পাস করা ডাক্তার না হয়েও শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ গ্রহন করে মানুষকে সেবা দিয়ে তাদের কাছে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন গরীবের ডাক্তার। গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবী গবীরের ডাক্তারের (সি আর ডাক্তার) স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হোক।
এলাকাবাসী জানান, বীরমুক্তিযোদ্ধা সি আর ডাক্তার উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের ঘুনিপাড়া গ্রামের মৃত মতিলাল দাসের ছেলে। তিনি ১৯৫৪ সালে এই গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে এস.এস.সি পাস করে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষন শেষে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ করেন। দেশ স্বাধীনের পর সরকারী বন বিভাগে ফরেষ্টার হিসাবে যোগদান করেন। চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন ঢাকার মামা বাড়িতে। ওই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যক্ষা বিভাগে ৬ মাসের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসেন। সে সময় সলিমাবাদে একমাত্র ডাক্তার ছিলেন দাদু লাল বিহারী দাস (মায়ের বাবা)। লাল বিহারী দাসের কাছ থেকে হাতে খড়ি হিসেবে বিভিন্ন প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষন নেন তিনি। ১৯৭৩ সালে তেবারিয়া জনতা কলেজ থেকে এইচ এস সি ও পরে নাগরপুর সরকারী কলেজ থেকে ¯œাতক পাস করেন।
তেবাড়িয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ বলেন, প্রায় ৪ যুগ ধওে তেবাড়িয়া গ্রাম সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস। উপজেলার ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষের কাছে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। গরীব-অসহায় মানুষকে বিনা ফি’তে চিকিৎসা দিতেন। এজন্য এলাকার মানুষ তাকে “গরীবের ডাক্তার” হিসেবে সম্বোধন করতেন। উনি এলাকার মানুষের কাছে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে এলাকায় কোনো এমবিবিএস ডাক্তার চেম্বার খুললেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি। কারন রোগীরা পল্লী চিকিৎসক সি আর ডাক্তারকে বাদ দিয়ে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যেত না।
সলিমাবাদ সহ উপজেলাবাসীকে ১৯৭৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত বিনামুল্যে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে গেছেন সি আর ডাক্তার।