টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এক সময় চাষ হতো তামাকের। এখন চাষীরা তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঝুকছে টমেটো চাষের দিকে। টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন এখানে শীত থেকে বসন্ত কাল পর্যন্ত প্রচুর টমেটো উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে। এ বছর নাগরপুর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত শৈত্য প্রবাহের ফলে টমেটো পাকতে দেরী হওয়ায় এখন চাষীরা অধিক মুনাফার লোভে গাছ থেকে কাঁচা টমেটো ছিড়ে মেডিসিন দিয়ে তা পাকিয়ে বাজারজাত করছে।
উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের বেটুয়াজানী গ্রামের সফল চাষী পাগলা। তার মতই আরো করিম শেখ, সবুর মিয়া, মোতাসিম, শহীদুল, জয়েদ আলী সহ আরো অনেকে। টমেটো ছাড়াও ফুলকপি, বাধাঁকপি, লাউ, বেগুনসহ নানা রকমের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ করছেন নাগরপুরের চাষীরা।
চাষী পাগলা মিয়া বলেন, আমরা এক সময় ধলেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু এখন উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আমরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছি। এর মধ্যে আমরা প্রতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন পেয়ে থাকি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাষী বলেন, ফলনের প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পেলেও শেষের টমেটোর দাম প্রতিকেজি ৫-৭ টাকায় নেমে যায়। যা আমাদের জন্য লাভজনক নয়। তাই আমাদের বাধ্য হয়ে মেডিসিন দিয়ে টমেটো পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি টমেটো বা সবজি রাখার জন্য কোন সবজি সংরক্ষনাগার থাকতো তা হলে আমাদের টমেটো পঁচে নষ্ট হতো না। আমরা আরো ভালো দাম পেতাম।
চাষী শহীদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বীজ কোম্পানির পরামর্শ ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায়, প্রশিক্ষন ও প্রযুক্তি নিয়ে তারা জৈব সার ও সেক্সফোরমেন ট্র্যাপ ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। বর্তমানে কয়েক একর জমিতে টমেটো ও সবজি চাষ করছেন। কিন্তু এবার ফলন ভালো হলেও শৈত্য প্রবাহের কারনে টমেটো পাকতে দেরী হচ্ছে। ফলে ভাল দাম পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত। তাই চাষীদের লোকসান ঠেকাতে ও বেশী উৎপাদনের জন্য তার দাবী উপজেলায় একটি সবজি সংরক্ষনাগারের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, টমেটো সোলানেসি পরিবারের লাইকোপার্সিকগনের অন্তর্ভুক্ত কোমল ও রসালো সবজি। আমাদের দেশে টমেটোকে বিলাতী বেগুনও বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমানে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে বলে এটা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্নাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোষ্টেটসহ ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। টমেটো একটি অর্থকরী ফসল। শুধু সবজি নয় সালাদ ও সস তৈরিতেও টমেটো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, এক সময় এ অঞ্চলের চাষীরা তামাকের চাষ করতো। কিন্তু আমরা তাদেরকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। এখন এলাকায় টমেটোর পাশাপাশি প্রচুর শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি কিভাবে মেডিসিন ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে টমেটো পাকানো যায়। এর বাইরে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের নিরাপদ সবজি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে কৃষকদের উৎপাদিত মেডিসিন ছাড়া টমেটো সরবরাহের ব্যবস্থা করছি যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায়।