নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের (টিআই) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন আখিনূর চৌধুরী নামে এক ভুক্তভোগী ব্যক্তি। পুলিশের আইজিপিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বুধবার সকালে তিনি এই বিষয়টি জানান।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল-সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকী ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে ঘর নির্মাণ করে গাড়ির কাউন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান ভাড়ার নামে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে আসছেন।
টিআই আবু নাঈম সিদ্দিকীকে দিনের বেলায় সড়কে দেখা না গেলেও রাতের বেলা বিভিন্ন সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সাইনবোর্ড ও চিটাগাং রোড এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। এছাড়া মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলো আটকে মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর আবু নাঈম সিদ্দিকী শিমরাইল-সাইনবোর্ড এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতাসহ মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি করে জনসাধারণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ওই অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, আবু নাঈমের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে আসছে মসজিদে রাসুলুল্লাহ (সা.) জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
করায় বেশ কয়েকদিন যাবত উত্তর সাইনবোর্ডে নির্মাণাধীন মসজিদে রাসুলুল্লাহ (সা.) জামে মসজিদের নির্মাণ কাজে বাধা দেন টিআই আবু নাঈম। পাশাপাশি মসজিদে রাসুলুল্লাহ (সা.) জামে মসজিদ ভাঙার হুমকি দিয়েছেন। টিআই আবু নাঈম মসজিদ ঘর ভেঙে উক্ত জায়গায় সিএনজি স্টেশন বানাতে চান। আর তিনি সেখান থেকে মোটা অংকের মাসোহারা আদায় করবেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
গত সোমবার রাত প্রায় দেড়টার সময় মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের থাকার ঘর ভরাটের জন্য ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলা হয়। এর পর টিআই আবু নাঈম সিভিল পোশাকে ১০-১২ জন পরিবহন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে মসজিদ ও মোয়াজ্জিনের থাকার ঘর ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রতিবাদ করলে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযাগকারী আখিনূর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) মসজিদের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমরা মসজিদের সংস্কার কাজ করছি।
সম্প্রতি শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকী মসজিদটি ভেঙে ফেলার জন্য বারবার হুমকি দিচ্ছেন। মসজিদের জায়গায় একটি সিএনজি স্টেশন করার জন্য পাঁয়তারা করছেন তিনি। আমরা এর প্রতিবাদ করায় আমাকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকীকে বারবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়ক ও জনপথের জমিতে কেউ অবৈধভাবে দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমি এ কার্যালয়ে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আ.ক.ম আক্তারুজ্জামান বসুনিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।