টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা প্রশাসন লাল মাটির পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে মাইকিং শুরু করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার বিধানের নির্দেশনা প্রদান করে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে একযোগে এই মাইকিং কার্যক্রম চলছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, ইটভাটার মৌসুম শুরু হলে মাটির বেচা-কেনার প্রতিযোগিতা চলে। এক বিঘা জমির মাটি বিক্রি করে অভাবী কৃষক ২-৩ লাখ টাকা পান। অনেকেই অর্থের লোভে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করছেন। এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলায় মাইকিং শুরু করেছে।
ইটভাটা মালিক সূত্রে জানা যায়, জিগজ্যাক পদ্ধতিতে একটি ভাটা করতে গেলে সর্বনিম্ন ১০ একর জমির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ৬০টি ভাটা স্থাপনে প্রায় ৬০০ একর ফসলি জমি ইটভাটার পেটে চলে গেছে। ভাটাগুলোর খোরাক জোগাতে ক্রমেই কমে যাচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল)। বছরে একটি ভাটা ৫০ থেকে ৬৫ লাখ ইট পোড়ায়। এক ইটভাটার ম্যানেজার জানান, তিন বিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ ফুট গর্ত করে পাওয়া মাটি দিয়ে এক মৌসুমের কাজ চলে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটা ও ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি গুরত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধে সবার সহযোগিতা লাগবে। যেখান থেকেই মাটি কাটার খবর আসবে সেখানেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে জরিমানা এবং সাজা প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম-সম্পাদক জানান, উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। এ কাজ অব্যাহত থাকলে জমিতে ফসল উৎপাদন কম যাবে। ঘাটাইলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, ৪৫১.৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঘাটাইল উপজেলার একতৃতীয়াংশই পাহাড়ি অঞ্চল। এরই মধ্যে ৬০টি ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে তৈরি করা এসব ভাটার সবগুলোই ফসলি জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটা স্থাপন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন, নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে ২-৩ ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ফসলি জমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ঘাটাইল উপজেলার আবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।