ডেস্ক নিউজ : সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়ার সময় এই পেশায় নানা রকম অনিশ্চয়তার কথা শুনেছিলেন জুবায়ের হোসেন (আসল নাম নয়)।
তারপরও দেশের জন্য কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষা জীবন শেষে সাংবাদিকতা পেশায় নাম লেখান। বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করেন।
তিন বছর পার করে এসে এখন তাঁকে বেতন-বোনাসসহ নানা অনিশ্চয়তায় বিকল্প নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।
শুধু জুবায়ের নন; চাকরির অনিশ্চয়তা, সময়মতো বেতন না পাওয়া, পদোন্নতি না হওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সাংবাদিককেই হতাশায় ভোগাচ্ছে।
বাংলাদেশে সংবাদপত্র, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ১৯১ জন সাংবাদিকের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের ৭৯.১ শতাংশই নিজ পেশা নিয়ে সন্তুষ্ট নন; বিষণ্নতায় ভুগছেন ৪২.৯ শতাংশ সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে নারী ৪৮.৪৮ আর পুরুষ ৪১.৭৭ শতাংশ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু রিস্ক টু মেন্টাল হেলথ অব বাংলাদেশি জার্নালিস্টস’ শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
গবেষকদলে আরো ছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক ড. সরকার বারবাক কারমাল ও সাবেক শিক্ষার্থী আপন দাস।
গবেষণা প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা আইজিআই গ্লোবালের ‘হ্যান্ডবুক অব রিসার্চ ইন ডিসক্রিমিনেশন, জেন্ডার ডিসপ্যারিটি, অ্যান্ড সেইফটি রিস্কস ইন জার্নালিজম’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রকাশ হয়েছে।
গবেষণার যা উঠে এসেছে –
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪২.০৯ শতাংশ সাংবাদিকই তাঁর পেশা নিয়ে কোনো না কোনোভাবে বিষণ্নতায় ভুগছেন; আর ৭১.০৭ শতাংশ সাংবাদিক এই পেশা ছেড়ে দিতে চান।
এই বিষণ্নতা আর চাকরি বিমুখতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চাকরির অনিশ্চয়তা। এই হার ৮৫ শতাংশ।
অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে – সময়মতো প্রমোশন না পাওয়া, কম বেতন এবং অত্যধিক কাজের চাপ। গবেষণায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে, অনেক মেধাবীই এই পেশায় কিছুদিন কাজ করে ছেড়ে দিয়েছেন।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, কপি এডিটর কিংবা সাব-এডিটরের চেয়ে বাইরে কাজ করা রিপোর্টারদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি কাজ করে।
তবে রিপোর্টার ও সাব-এডিটরের থেকে নিউজ এডিটর তুলনামূলকভাবে কম বিষণ্নতায় ভোগেন। এই হারে রিপোর্টার ৪৪.৩২, কপি এডিটর ৩৪ এবং নিউজ এডিটর ২৮.৫৭ শতাংশ।
গবেষকদলের প্রধান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নিয়ে দেশে সচেতনতার মাত্রা খুবই কম। সাংবাদিকতা পেশা ও সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রশ্নে কর্মক্ষেত্রে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবশ্যই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নিয়মিত বেতন পেলে একজন সাংবাদিক মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।
এ ছাড়া নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর বাইরে থেকে সাংবাদিকের ওপর কোনো চাপ আসতে পারে; তখন সম্পাদক ও সহকর্মীরা পাশে থাকলে তিনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।
সাংবাদিকের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাংবাদিক ইউনিয়ন ও মিডিয়া হাউসের সম্মিলিত চেষ্টা থাকা দরকার।’ সূত্র – কালের কণ্ঠ; সম্পাদনা – অলক কুমার