টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামিকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালাসপ্রাপ্ত ১০ আসামিরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান (রানা), টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা), সানোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন, বাবু, ফরিদ হোসেন, মাসুদুর রহমান ও আলমগীর হোসেন। মামলার অন্য দুই আসামি আনিসুল ইসলাম ও মো. সমীর মামলা চলাকালে কারাগারে মারা যান।
বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ২৩ জুলাই এ আদেশ দেন। আদালত ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার নথিও তলবের আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের এ আদেশ গত রোববার ডাকযোগে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং চিফ জুডিশিয়াল আদালতে পৌঁছায়। তবে মঙ্গলবার বিষয়টি জানা যায়। উভয় আদালতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান গত ২ ফেব্রুয়ারি বহুল আলোচিত ফারুক হত্যা মামলার রায় দেন। আদালত মোহাম্মদ আলী ও কবির হোসেন নামের দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মোহাম্মদ আলী ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফারুক হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁর জবানবন্দিতে এই হত্যার সঙ্গে আমানুর রহমান ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি পলাতক। অপর দণ্ডিত কবির হোসেন ২০১৪ সাল থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।
নিহত ফারুক আহমেদের ছেলের কথা –
নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ সুমন মজিদ মুঠোফোনে বলেন, “দুইজনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে যাদের নাম এসেছে, তার শাস্তি না হয়ে খালাস হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি রিভিউ করি।” আমার রিভিউ এর আগে এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিলের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমি নিজে উচ্চ আদালতে আপিলের উদ্যোগ নিই। আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটরি অনুবিভাগ আমাকে গত ২৬ জুন নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে ফৌজদারি রিভিশন মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল দায়ের করি।’
আদালত থেকে জানা –
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৩ জুলাই বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আহমেদ সুমন মজিদের আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুল এবং বাদীপক্ষে ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন।
ঘটনাক্রম –
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুরদের চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।