বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দাবির একাংশ আদায় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পূনপ্রতিষ্ঠা হয় নাই। অনেক লড়াই সংগ্রাম, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আমরা দেশে একটা পরিবর্তন পেয়েছি। আমরাই এক দফার আন্দোলন শুরু করেছি। সেই এক দফা ছিলো- স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এই স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদে পরিনত হয়েছে, পতন হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সদ্য কারামুক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জেলা বিএনপি এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ১৬ বছর ধরে লড়াই করেছে এই স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য। দেড় মাসের লড়াইয়ে লড়াই শেষ হয়ে যায় নাই। আমাদের অসংখ্য সাথী গুম হয়েছে, গুম হয়েছে, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। সালাম পিন্টুর মতো অনেকে সহকর্মীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে, অনেকে কারাগারে অথবা গুম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যে লড়াইটা গড়ে উঠেছিল, তার চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা জুলাই-আগস্ট মাসে আমরা বিজয় অর্জন করেছি কত কথা কতজন বলেন।
এসময় তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল আছে কিছু নতুন, কিছু পুরাতন। তারা জনগনকে বোঝাতে চেষ্টা করছে বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। সংস্কার কী? খায় না মাথায় দেয়? বাংলাদেশে সকল কল্যাণকর সংস্কার করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তার পুরোটাই সংস্কার কর্মসূচি। সংস্কারের প্রত্যেকটা বিষয় ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা লড়াই করেছে। এখনও লড়াই শেষ হয়ে যায় নাই। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকের কারাগারে বা গুম অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ৫ আগস্ট আমি জেলখানায় ছিলাম। আমাদের ৪১৮ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে ছিল। অনেক লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগ-তীতিক্ষার পর দেশে পরিবর্তন এসেছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় নাই। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে যা বলেন –
নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন যত সংস্কার আপনে করেন না কেন, যদি কোন আইনের সংস্কার করতে হয়, যদি সংবিধানের পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে সেটা করতে হবে জাতীয় সংসদে। সেজন্য বলি সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। বলি নাই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। যারা জয়লাভ করবে, তারাই সরকার গঠন করবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন –
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই যে আব্দুস সালাম পিন্টু মৃত্যুদÐের মুখোমুখি হয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন কনডেম সেলে। এই যে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী খুন হলেন, গুম হলেন, জেল খাটলেন, অত্যাচারিত হলেন, আহত হলেন; তারা এর মাধ্যমে আপনাদের কাছ থেকে এদেশে যত বিএনপি নেতাকর্মী আছে, তাদের কাছ থেকে কি এটুকু কি আশা করতে পারে না, “যে আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে বিএনপির বদনাম হয়।” আপনারা এমন কিছু করবেন না জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে যদি কেউ অত্যাচার-নির্যাতন করে তার ফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে। কাজেই যেই করতে যাবে, সবাই মিলে তাকে ঠেকাবেন। তাকে বাঁধা দিতে হবে। বলতে হবে তাকে, তোমার ১০-২০ লাখ টাকার জন্য গোটা বাংলাদেশে এত মানুষ মারা গেছে, তাদের মৃত্যু আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারবো না।