টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ট্রাক প্রতি এক হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার পরও বন্ধ রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পশ্চিমের মাঠে ট্রাকের মালামাল লোড ও আনলোডের কাজ। ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার একচেটিয়া রাজত্ব করার জন্য ঈদের পরদিন থেকে লোড আনলোডের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কুলিরা। এতে ওই কুলি ইউনিয়নের কুলিদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুই শতাদিক কুলির পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি, কালিহাতী থানার ওসি ও কালিহাতী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি কুলিরা বলে অভিযোগ উঠেছে।
কুলিরা জানান, দেশের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধ সেতু মহাসড়ক। বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তর বঙ্গের ১৬টি জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার যানবাহন যাতায়াত করে। যানবাহন চলাচলের সময় বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পশ্চিমের মাঠে ট্রাকের মালামাল লোড ও আনলোডের কাজ করে দুই শতাধিক কুলি। ২২ বছর আগে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় কয়েকটি এলাকার লোকজনেরা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পশ্চিমের মাঠে ট্রাকের পাথর, সিমেন্ট ও বালুসহ মালামাল লোড ও আনলোডের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার তার লোকজন নিয়ে এসে লোড আনলোডের কাজ বন্ধ করে দেন। তাকে চাঁদা দিলে লোড আনলোডের কাজ চলবে। এমন কথার পরিপেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ তার লোকজনকে ট্রাক প্রতি এক হাজার ২০০ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে কুলি সমিতি থেকে ‘কনসিডিয়াম’ নামে তাদের চাঁদা দেওয়া হয়।
কুলিরা আরও জানান, কনসিডিয়ামের টাকা চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার, ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী আল মামুন তালুকদার ও চেয়ারম্যানের ম্যানেজার মো. লেবু মিয়া পেয়ে থাকেন। প্রতিদিন তারা ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান একচেটিয়া রাজত্ব করার জন্য ঈদের পরদিন থেকে লোড আনলোডের কাজ বন্ধ করে দেন। প্রতি কুলিকে ৩০০ টাকা করে হাজিরা কাজ করতে বলেন। তা না হলে অন্য কুলি এনে কাজ করাবেন বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পশ্চিমের মাঠে চাঁদা দিয়ে একাধিক ট্রাক কেনার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদারের বিরুদ্ধে।
মো. আজিজ নামের এক কুলি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত কুলির কাজ করে সংসার চালাই। চেয়ারম্যানসহ তার লোকজনদের প্রতিদিন চাঁদা দেওয়ার পরও তিনি একচেটিয়া রাজত্ব করার জন্য কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে লোড আনলোড বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাতে এখানে আগের মতো কুলির কাজ করে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে চলতে পারি।
অপর কুলি মো. মোশারফ বলেন, আমি শুধু কুলির কাজই শিখেছি। অন্য কোন কাজ পারি না। তাই অন্য কাজ করতেও যাইনা। ঈদের পরদিন থেকে আমাদের কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ করতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন এসে আমাদের মারধর ও গাড়ি ভাংচুর করে। চেয়ারম্যান হযরত তালুকদার দিন হাজিরা কাজ করতে বলেন। ৩০০ টাকায় দিন হাজিরা করলে আমাদের তিন বেলা খেতেই খরচ হবে। আমরা তাহলে চলবো কিভাবে?
কুলি মো. মাজেদ বলেন, কুলির কাজ খুবই কষ্টের কাজ। এক গাড়ি গরম সিমেন্ট লোড আনলোড করতে গেলে শ্রমিকের হাতের তালু ফেটে রক্ত পড়ে। খুব পরিশ্রম করেই আয় রোজগার করি। তারপরও কুলি কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় করোনাভাইরাসের মধ্যে চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার পশ্চিমের মাঠ শাখার কুলি সর্দার আলী আকবর আকন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এখানে কুলির কাজ করি। এই মাঠে ২২৫ জন কুলি কাজ করে তাদের সংসার চালায়। হযরত চেয়ারম্যানসহ তার লোকজনদের প্রতি চাঁদা দেওয়ার পরও তিনি কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি একচেটিয়া রাজত্ব করতে চান। তিনি প্রতি কুলিকে ৩০০ টাকা করে হাজিরা দিয়ে কাজ করাতে চান। যা কখনও সম্ভব নয়। তাকে গত তিন মাসে ৭৫ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছে।
কুলি সর্দার আলী আকবর আকন্দ আরো বলেন, ট্রাকের পাথর, সিমেন্ট ও বালু লোড আনলোড করা অনেক কঠিন কাজ। সেখান থেকে রক্ত চোষার মতো চাঁদা নিয়ে থাকেন হযরত চেয়ারম্যান। উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে লোড আনলোডের কাজটি পূণরায় চালু করার জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, আমার নিজেরেই ব্যক্তিগত ৫০টি ট্রাক রয়েছে। আমি সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকি।