ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এসে সেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। পারস্পারিক আস্থা বাড়ানো ও স্থিতিশীলতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে আগাচ্ছে দু-দেশ। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দীর্ঘস্থায়ী সংলাপ, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতার উপর।
গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকলেও, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই স্থিতিশীলতা, পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতার মূল্য বুঝতে শুরু করেছে। সম্প্রতি কূটনৈতিক বিনিময় ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকগুলো সম্পর্ক জোড়া লাগানোর এবং মতবিরোধ দূর করার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে।
১ জানুয়ারি, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন জানান, ২০২৫ সালে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক একটি একক বিষয়ে আটকে থাকবে না।তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বিষয়ে দিল্লি এখনও সাড়া দেয়নি।
উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “এটি শুধু একটি বিষয়। আমাদের পারস্পরিক স্বার্থে আরও অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।”ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ৩ জানুয়ারি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তবে এই বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।”১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বিজয় দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এ ধরনের বিনিময় অনুষ্ঠান দুই দেশের বন্ধুত্বের অনন্য উদাহরণ।সম্প্রতি ৯৫ জন ভারতীয় এবং ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে চাল আমদানি চুক্তি নতুন সরকারের অধীনে প্রথমবার কার্যকর হয়েছে।ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির সফরে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “আমরা একটি ইতিবাচক, স্থিতিশীল এবং গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।”বিশ্লেষকরা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ ও কৌশলগতভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। উভয় দেশই বুঝতে পারছে, জনগণই এই সম্পর্কের মূল অংশীদার। তাই পারস্পরিক সংবেদনশীলতা ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে।