সখীপুর প্রতিনিধি : টাংগাইলের সখীপুরে বন এবং পরিবেশ আইন অমান্য করে অবাধে ফসলী জমির মাটি, বনভুমি উজারসহ লাল মাটির টিলা কাটার মহোৎসব চলছে।
এই এলাকায় প্রভাবশালী বেকু ও ট্রাক মালিকদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে একটি মাটি কাটা ও বিক্রি ব্যবসায়ী চক্র।
এই চক্রটিই সকল মহল নিয়ন্ত্রণ করে মাটি কাটা ও বিক্রির ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছে না মাটি ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আইন অমান্য করে ভেকু দিয়ে ফসলী জমির টপ সয়েল ও লাল মাটির টিলা কাটা হচ্ছে।
উজার করা হচ্ছে শাল গজারি বন। মাটি গুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইট ভাটাসহ বাড়ী নির্মাণ কাজে।
উপজেলার কাঁকড়াজান ইউনিয়নে পলাশতলী কলেজের পাশে একটি ও বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদে কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে একটি, মোট দুইটি অবৈধ ইট ভাটা তৈরি হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলী জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাক দিয়ে এসব ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি জমা করা হচ্ছে।
পৌর শহরের আনাচে কানাচের বাড়ী তৈরি করার কাজেও মাটি নেওয়া হচ্ছে।
মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেনীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলী জমির মাটিতে পুকুর খনন; গজারি বন কেটে উজার এবং পরবর্তীতে লাল মাটির টিলা কেটে বিক্রির কাজে উৎসাহিত করছে।
আর কৃষকরা সামান্য কিছু নগদ টাকার আশায় ৮/১০ ফুট গভীর করে মাটি বিক্রি করছে। ফলে অনেক জমিই ডোবায় পরিনত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা –
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শত শত একর ফসলী জমির মাটি, বনভূমি উজারসহ লাল মাটির টিলা কাটা হচ্ছে।
যার কারনে আবাদী জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।
টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ী নির্মাণ ডোবা ভরাট, রাস্তা সংস্কার, রাস্তা নির্মাণ, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, ইট ভাটা সহ বিভিন্ন কাজে।
অনেকে আবার অনুমতি ছাড়াই পুকুর কাটার কথা বলে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে; এতে করে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে পরিবেশের প্রতি হুমকি।
শুধু দিনের আলোয় নয় রাতের আঁধারেও চলে লাল মাটির টিলা কাটা।
আবার কখনো কখনো প্রশাসনের নজরদারি বেশি থাকলে মাটি ব্যবসায়ীরা রাতের সময়কে উত্তম সময় হিসেবে বেছে নেয়।
কি কি ঘটছে ওই এলাকায় –
টাংগাইলের সখীপুরে ১টি পৌরসভা ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
কাঁকড়াজান, বহেড়াতৈল, কালিয়া, গজারিয়া, বহুরিয়া, দাড়িয়াপুর, যাদবপুর, হাতিবান্ধা, হতেয়া রাজাবাড়ি, বড়চওনা ইউনিয়নে বনভূমি উজারসহ বড় বড় লাল মাটির টিলা রাতের আঁধারে কেটে সাবার করা হয়েছে।
অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৬ (খ) ধারা অনুযারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকার বা আধা সরকারি বা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা নিষিদ্ধ।
অথচ উপজেলার কচুয়া বিটের আওতায় ছোট চওনা হারুন মার্কেট এলাকায় মোকসেদ আলীর দুই ছেলে সেলিম এবং বাসেদ মালিকানাধীন দাবি করে শাল গজারির বন উজার করে ভেকু দিয়ে লাল মাটি কেটে টিলা ধ্বংস করছে বন বিভাগ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায়।
আর সেই মাটি অন্যত্র বিক্রি করছে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও তোতা মিয়া।
বহেড়াতৈল বিটের আওতায় আমতৈলের আফাজ উদ্দিনের জমির মাটি পুকুর খনন করে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী লালন ও আরিফ বিক্রি করছে পার্শ্ববর্তী উপজেলার রতনগঞ্জ ও বল্লা এলাকায়।
এতে লাভবান হচ্ছে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা, প্রকৃত জমির মালিক পাচ্ছে না মাটি বিক্রির টাকা, জমির মালিক হারাচ্ছে ফসলী জমি ও বনভূমি।
উপজেলার গড় গোবিন্দপুর ও দাড়িয়াপুর লাল মাটির জন্য বিখ্যাত। আর সেই লাল মাটির টিলা কেটে সমতল করে দিচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা।
সখীপুর পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্র পুরাতন ভোট অফিসের সামনে মাটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন সহ অফিস রয়েছে।
সেই সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ইশারায় মাটি কাটার পরিকল্পনা করা হয়।
মাটি ব্যবসায়ীদের হাত অনেক শক্তিশালি থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য –
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চিত্রা শিকারী বলেন, কেউ যদি খাস জমিতে মাটি কর্তন করে; বনভূমি উজার করে আর সেই খবর আমার কাছে আসে, আমি অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কর্তন করে কি না? এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমাকে ম্যানেজ করে মাটি কর্তন করা হয়; এটা প্রমান দিতে পারলে আমি চাকরি ছেড়ে চলে যাবো।
যারা আমার নাম ব্যবহার করে মাটি কর্তন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার