অলক কুমার : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী (Turning Point) অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭ (সাত)টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। সেই সময় কাদেরিয়া বাহিনীর দুধর্ষ সাহসী চৌকশ কমান্ডার মেজর হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের নেতৃত্বে একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ এবং এসটি রাজন আক্রমন করে অস্ত্রগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭ (সাত) টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল যমুনা ধলেশ্বরী নদীর পথে মাটিকাটা নামক স্থানে নদীপথে করা নজরদারীর দায়িত্বে ছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর দুধর্ষ সাহসী চৌকশ কমান্ডার মেজর হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের উপর। তার অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও অল্প সংখ্যক সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুটি অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস.ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি -৩ এবং এসটি রাজন ধ্বংস করার মাধ্যমে হানাদারদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
জাহাজগুলো আক্রমণ ও দখল করে এক লক্ষ ২০ হাজার বাক্সে ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘ ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের সামগ্রীক ভাবে অন্য কোথাও মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হয়নি।
পরবর্তীতে যুদ্ধ জাহাজ ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করার জন্য পাকিস্তানি কমান্ডেন্ট লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ও ব্রিগেডিয়ার কাদের খানের নেতৃত্বে ৪৭ ব্রিগেড, ৫১ কমান্ডো ব্রিগেড ও হানাদার বিমান বাহিনীর দুটি এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান দ্বারা মুক্তিবাহিনীর উপর চর্তুদিক থেকে আক্রমণ করে। হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী (Turning Point) অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসম ও বলিষ্ঠ সাহসীকতার নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” ও “জাহাজমারা হাবিব” উপাধিতে ভূষিত করেন।