বাংলাদেশে দীর্ঘ তিন দশক ধরে দারিদ্র্য হ্রাসের ধারা চললেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। শুধু তাই নয়, বিপুলসংখ্যক মানুষ এমন ঝুঁকিতে রয়েছে যে সামান্য আঘাত, অসুস্থতা বা চাকরি হারালেই তারাও দরিদ্রতার কাতারে চলে যেতে পারে।
দারিদ্র্যের হার বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ করোনার আগে পর্যন্ত দারিদ্র্য কমছিল ধারাবাহিকভাবে। অথচ মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে চিত্র বদলে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর জরিপ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশের দরিদ্রতার হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮.৭ শতাংশ। অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি।
চরম দারিদ্র্যের দ্রুত বিস্তার জরিপে দেখা গেছে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাইরেও প্রায় ১৮ শতাংশ পরিবার এখন ঝুঁকিতে। সামান্য আয়ের ব্যাঘাত বা খরচ বেড়ে গেলেই তারা দরিদ্র হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে চরম দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালের ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৫ শতাংশে। এর মানে, অন্তত পৌনে পাঁচ কোটি মানুষ বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে।
আয়ের তুলনায় ব্যয়ের চাপ বাস্তব চিত্র আরও উদ্বেগজনক। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় একটি পরিবারের মাসিক আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে খাবারের পিছনে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়ও লাগামহীন। প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার এখন আগের তুলনায় বেশি ঋণের বোঝা বহন করছে। এতে আর্থিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতামত সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হলেও তার সুফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। উচ্চ আয়ের মানুষের আয় বেড়েছে, কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।”
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান দারিদ্র্য বৃদ্ধিকে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির ফল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে দ্রুত অবনতির পথে। তারা সঞ্চয় ভেঙে কিংবা ধারদেনা করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু দ্রব্যমূল্য কমানো নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বাড়াতে হবে।”
সার্বিক চিত্র অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নয়, আয়ের উৎস বাড়ানো এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শক্তিশালী করাই এখন জরুরি। অন্যথায় দারিদ্র্যের হার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত দারিদ্র্যের কাতারে যুক্ত হতে পারে।