রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতার এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে মানুষ জীবন রক্ষার চেষ্টা করলেও অনেক সময় পুলিশ নিজেরাই ঘটনাস্থলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি আদাবরের শ্যামলী হাউজিংয়ের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে সেখানে অপহরণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা স্থানীয়দের মব হামলার মুখে পড়ে। কনস্টেবল আলামিন দায়ের আঘাতে জখম হন এবং পুলিশ ভ্যান ভাঙচুর করা হয়।
জিল্লুর রহমান বলেন, এই একটি ঘটনার অভিঘাত গোটা বাহিনীর ভেতরে ঢুকে গেছে। এখন ডিএমপি কর্মকর্তারা পর্যন্ত স্বীকার করছেন— জরুরি কল মানেই ঝুঁকি। কখনো পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে দেরি করছে, কখনো আবার যাচ্ছেই না।
তিনি আরও বলেন, নরসিংদীর শিবপুর কিংবা গাইবান্ধার মতো ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে, রাষ্ট্রীয় সেবা ও নাগরিকের আস্থা দুই-ই ভেঙে পড়ছে। ভয়ের মূল কারণ শুধু মবের আক্রমণ নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা অভিশাপ। অতীতে নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর দমনপীড়ন, সমালোচকদের বিরুদ্ধে মামলা, আইনকে ব্যবহার করে ভয় দেখানো—এসবের সামনের কাতারে ছিল পুলিশ।
গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি পাল্টালেও মানুষের ক্ষোভ রাতারাতি মুছে যায়নি। ফলে অনেক জায়গায় জনতা থানায় গিয়ে চাপ তৈরি করছে, আর পুলিশ কর্মকর্তারা টার্গেটেড আক্রমণের আশঙ্কায় মাঠ পর্যায়কে ‘লো প্রোফাইল’ করে রেখেছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ৬ কোটির বেশি কল এসেছে। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই সাহায্য পাননি, কখনো ফোনে মীমাংসা করতে বলা হয়েছে, আবার কোথাও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও এসেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া ও লোকমুখে, যা ৯৯৯-এ আস্থা সংকটকে আরও গভীর করছে।