নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের বাসাইলে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইকে উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন।
এসময় তাদের দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধারও করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের বসতবাড়ি ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানে নের্তৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুবকর সরকার।
আরো পড়ুন – মধুপুরে কলেজ পড়ুয়া নববধুর আত্মহত্যা
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নেয়ামত উল্ল্যা, বাসাইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. গোলাম মোর্সেদ খান প্রমুখ।
প্রকৃত ঘটনা –
জানা যায়, বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান পান্না ও তার ভাই শহিদুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমি দখল করে বসত-বাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন।
এক সময়ের হালটটি প্রায় পাঁচ বছর আগে স্থানীয়রা রাস্তা নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়।
পরে রাস্তাটি স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাস্তবায়নের জন্য বাসাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদের কাছে আবেদন করেন।
এরপর মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদসহ সংশ্লিষ্টরা জায়গা পরিমাপ করে ও কাগজপত্র দেখে রাস্তা করার জন্য প্রকল্প দেন।
ওই সময় ট্রেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হলেও বসত-বাড়ির জন্য কাজটি আটকে যায়।
ফলে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শাহিনুর রহমান পান্না ও তার পরিবারের দ্বন্দের সৃষ্টি হয়।
পরে শাহিনুর রহমান পান্না সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজনের নামে চারটি মামলা দায়ের করেন।
আরো পড়ুন – কালিহাতী সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
এক পর্যায়ে হালট শ্রেণির ১৯ শতাংশ ভূমি থেকে দখলীয় অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শাহিনুর রহমান পান্না ও তার ভাই শহিদুজ্জামান মিয়াকে নোটিশ দেওয়া হয়।
পরে তারা স্থাপনা না সরানোর কারণে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুবকর সরকারের নের্তৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে উপজেলা প্রশাসন, বাসাইল পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে।
ওই আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য –
সরকারি জমি দখল করে রাখা শাহিনুর রহমান পান্না বলেন, ’অভিযানে তিনটি ঘর, একটি রান্না ঘর ও পাকা টয়লেট ভেক্যু দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় আমাদের ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মূলত স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেনসহ কয়েকজনের সাথে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাস্তার নাম করে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
নকশায় হালট রয়েছে। রাস্তা হোক আমরাও চাই। আমাদের জায়গা বুঝিয়ে না দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
জমি সংক্রান্ত এখনও তিনটি মামলা চলাচল রয়েছে। উচ্ছেদে ক্ষতির ঘটনায় মামলা করা হবে।’
জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –
স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, ‘এটা সরকারি রাস্তা। কিন্তু তারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
কোনো মানুষ মারা গেলে লাশ দাফনের জন্য কোলে অথবা কাঁধে করে নিতে হয়। রাস্তাটি হলে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে।
১৮২ মিটার এই রাস্তাটি সেকান্দার আলী মাস্টারের বাড়ির মোড় থেকে চেলাবাড়ী হয়ে বাসাইল-পাথরঘাটা পাকা সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে।
আরো পড়ুন – মধুপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীকে ধর্ষণ চেষ্টা। থানায় অভিযোগ
সার্ভেয়ার মো. গোলাম মোর্সেদ খান বলেন, ‘ব্রাহ্মণপাড়িল মৌজায় এসএ ১ নম্বর খাস খতিয়ানের হালট শ্রেণির ১৯ শতাংশ জমি।
এটা পরবর্তীতে বিএস রেকর্ডে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়।
শাহিনুর রহমান পান্না ও তার ভাই শহিদুজ্জামান অবৈধভাবে দখল করে হালটটি আটকে রেখেছে।
পরে স্থাপনা সরানোর জন্য তাদেরকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বাক্ষরিত নোটিশ দেই।
স্থাপনা না সরানোর কারণে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি।
পরে সেখান থেকে গত ২৩ জুন নোটিশ জারি করা হয়। এর ভিত্তিতে উচ্ছেদ অভিযান বাস্তবায়ন করা হয়।
এরআগেও তাদেরকে স্থাপনা সরানোর জন্য দুইটি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।’