আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য: ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি—এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।’
দিবসটি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), ইউনিসেফ ও দেশীয় এনজিওগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীসহ শিল্পাঞ্চলে টিভিসি প্রচার, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ এবং বিশেষ পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে শিশুশ্রমমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১–২৫’ অনুযায়ী কাজ চলছে। কিন্তু বাস্তবচিত্র হতাশাজনক। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে, দেশে বর্তমানে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার, যা ২০১৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। অথচ ২০০৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ এবং তা কমে ২০১৫ সালের পর ১৭ লাখে নেমেছিল।
শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই এবং যে বরাদ্দ রয়েছে তা সঠিকভাবে তদারকি হয় না। এডুকো বাংলাদেশ-এর শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান বলেন, “শুধু পরিকল্পনা নয়, আইনের বাস্তব প্রয়োগ, সামাজিক সুরক্ষা ও সচেতনতা জরুরি।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, শিশুশ্রমে নিয়োজিত ২০ লাখেরও বেশি শিশু কোনো পারিশ্রমিক পায় না। আর যারা পায়, তাদের গড় আয় মাত্র ৬,৬৭৫ টাকা। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাত—গৃহকর্ম বা ক্ষুদ্র কারখানায় কাজ করা শিশুদের বেতনবঞ্চিত রাখার প্রবণতা বেশি।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি অনুযায়ী, ১২–১৭ বছর বয়সীরা হালকা ও ঝুঁকিহীন কাজে নিয়োজিত হলে তা অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫–১১ বছর বয়সী কোনো শিশুর শ্রম—ঝুঁকিমুক্ত হলেও—অবৈধ।
দিবসটির তাৎপর্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা ও অজ্ঞতা শিশুশ্রমের মূল চালক। সরকার ও সমাজকে যৌথভাবে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে শিশুরা কাজে নয়—ফিরে যেতে পারে তাদের শৈশব ও স্কুলে।”
সম্পর্কিত খবর:
- শিক্ষার বদলে শ্রমে শিশুরা: বাড়ছে ঝুঁকি, কমছে ভবিষ্যৎ
- শিশুশ্রমে কারখানা মালিকের জেল, নজির স্থাপন
- টেকসই উন্নয়নে বাধা শিশুশ্রম, বলছে জাতিসংঘ