বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ক্ষমতায় ২৮০টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিচ্ছে। এছাড়া আরও এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনের আবেদন বর্তমানে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঋণ নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জমা দিতে পারছে না। তাই ৫০ কোটি টাকার ঋণের বেশি থাকা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছে যারা এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ শাসনামলে বন্ধ ছিল। এদের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ও মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারি ও ডলার সংকটের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঋণ অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এনার্জিপ্যাক গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বিল্ডট্রেড গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধাও দেয়া হয়েছে।
বিনোদন, মিডিয়া ও অন্যান্য খাতে অবস্থিত সৌরভ গ্রুপ, এরশাদ গ্রুপ, ব্লু প্ল্যানেট গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাধারণত খেলাপি ঋণ নবায়নের জন্য গড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়, তবে এবারের বিশেষ সুবিধায় মাত্র ১ শতাংশ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, করোনাভাইরাস ও ডলারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সুযোগ দেওয়া যৌক্তিক, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ মেয়াদ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিতরণ করা ব্যাংক ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। গত জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭ শতাংশের বেশি। এক বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।