টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চাঁদ সওদাগর ও বেহুলা লক্ষিন্দরের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে যমুনা নদীতে আয়োজিত হলো দিনব্যাপী লোকজ উৎসব “শাওনের ডালা”।
রোববার (১৭ আগস্ট) এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে গ্রামীণ সাংস্কৃতিক সংগঠন সাধনা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ব্রতীর সহায়তায়। নলিন বাজার ঘাট থেকে বর্ণিলভাবে সাজানো একটি বড় ট্রলার যাত্রা শুরু করে—যেখানে গানে গানে তুলে ধরা হয় বেহুলা-লক্ষিন্দরের জীবনগাথা।
ট্রলারটি যমুনায় চলার সময় এটি যেন পরিণত হয় একটি ভাসমান মেলায়। সেখানে ছিল মাটির খেলনার দোকান, খাবারের স্টল, চা-স্টল এবং ছিল মনোমুগ্ধকর যাত্রাপালা। সাতটি ঘাটে মনসা দেবীর উদ্দেশে ভোগ দেওয়া হয় এবং শেষ ঘাটে কলাগাছের ভেলায় লক্ষিন্দরকে ভাসিয়ে তার পুনর্জীবনের প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়।
এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান দেখতে নদীতীরে ভিড় করে হাজারো দর্শনার্থী। অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও গবেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিত্রিতা বলেন, “লক্ষিন্দরের ভেলায় ভেসে যাওয়া দেখে চোখে পানি চলে এসেছে। এতদিন শুধু বইয়ে পড়েছি, আজ বাস্তবে দেখলাম।”
ব্রতীর প্রতিনিধি মাইকেল মনিশাহা বলেন, “এই আয়োজন শুধু হৃদয় ছুঁয়েছে না, বরং আমাদের লোকজ সংস্কৃতির গুরুত্ব আবারো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই উৎসব আয়োজন করা হবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রদীপ্ত সাহা জানান, “এটি শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের হারানো ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার।”
এই আয়োজন ইউনেস্কোতে নিবন্ধনের জন্যও প্রস্তাব করা হচ্ছে। ৮টি বিভাগের পক্ষ থেকে ৮টি সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা ইউনেস্কোকে পাঠানো হবে।
সাধনার কো-অর্ডিনেটর লাবণ্য সুলতানা বলেন, “বেহুলা লক্ষিন্দরের কাহিনির মাধ্যমে যে জীবন সংগ্রাম আর বিশ্বাসের বার্তা ফুটে উঠেছে, তা গ্রামবাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।”