টাঙ্গাইলের হোয়াইট গোল্ড বা সাদা সোনা খ্যাত ভূঞাপুরের বালু উত্তোলন ও বিক্রি ব্যবসায় পতিত আওয়ামী লীগের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। কথিত আছে ভূঞাপুরের পাঁচ খলিফা এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। আর মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ আমলের ব্যবসায়ীরা। আর ব্যবসার থেকে একটি অংশ বিএনপির ২/১ জন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতাদের কাছেও যায় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এইসব বালুর ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রন করে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান। জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান মাধ্যমেই ঘাটের কোটি-কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়। সেই ভাগের টাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়, এক কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা, জেলা বিএনপি নেতাদের কাছেও যায় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। যা নিয়ে পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসছে।
জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে দলীয় নেতা-কর্মীরা অবৈধভাবে ভূঞাপুরের প্রায় ২৫-৩০টি ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করত। আর এই কাজে তাদের নেতৃত্ব, সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিধান করত টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোটমনির। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর ছোটমনিরের স্থানে অবস্থান নেন ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু। আর তার সঙ্গী হয় আরো তিন জন। যাদের একসাথে চার খলিফাও বলা হচ্ছে। আর এই চার খলিফার প্রধান হলো ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট গোলাম মোস্তফা। সেই তিনজন হলো- ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি সোলায়মান হোসেন লিটন, নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডল, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান শাহীন। আর তাদের অন্যতম সহযোগী জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডলের আপন ভাই ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলম মন্ডল ও তাদের চাচাতো ভাই জুরান মন্ডল। জুরান মন্ডল নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে নিকরাইল থেকে গোবিন্দাসী পর্যন্ত ১৮টি পয়েন্টের ২৫-৩০টি ঘাট।
স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে যারা অবৈধভাবে বালু ঘাটগুলো চালাতো, ২/১ জন বাদে সবাই এখনো তাদের ঘাট চালায় বিএনপি নেতাদের সাথে মিলে। তারা জানায়, জুরান মন্ডল নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর মন্ডল ও আলম মন্ডল বিএনপি করে। এখন তারা মিলেমিশেই বালু ঘাট চালায়।
বিএনপি সূত্র জানায় –
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন সরকারের টাকা নিয়ে তার সাথে ব্যবসা করছে আলম মন্ডল। ভূঞাপুরের সাবেক মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের খুবই ঘণিষ্ট ছিল পাভেল নামের এক বালু ব্যবসায়ী। নিকরাইল ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আকবর প্রামাণিক ও মোজাফ্ফর প্রামাণিক পাভেলের টাকা দিয়ে তারই ঘাট চালায় ও ব্যবসা থেকে লাভ ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ত্যাগী বিএনপি নেতাকর্মী।
সূত্রটি জানায়, সাবেক সংসদ সদস্য ছোটমনিরের ঘণিষ্ট সহচর গোবিন্দাসীর লুৎফর রহমান ঠান্ডু এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় গোবিন্দাসীতে বালু ঘাট পরিচালনা করছে। অথচ ৫ আগস্টের আগে এরা সার্বক্ষণিক ছোটমনিরের সাথে থাকত। আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিং করত। গোবিন্দাসীর আরেক বিএনপি নেতা মওলার দখলে রয়েছে গোবিন্দাসী মাছ বাজার ঘাটটি।
বিশ্বস্ত সূত্রটি আরো জানায়, নিকরাইল ইউনিয়নের জাহাজমারা ঘাটে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল সামাদের উত্তোলিত বালু বিক্রিতেও বাঁধা দিচ্ছে আলম মন্ডল। বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সামাদ বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাদের জানালেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
ভূঞাপুর বিএনপি নেতাদের কথা –
এই বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে বালু ঘাট পরিচালনার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন। তিনি বিষয়টিকে স্থানীয় ব্যাপার ও তাদের যদি জায়গা জমি থাকে তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। বিএনপি কাউকে সেল্টার দেয় না। হয়ত বিএনপি কাউকে ডিস্টার্ব করে না। এসময় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, আওয়ামী ও বিএনপির চরিত্র এক না। এসময় তিনি আরো বলেন, কেউ যদি বিপদে পরে আমার কাছে আসে, আমি তার পাশে থাকতেই পারি। পরে বলেন, আপনারা দেখবেন আমার নামে কোন ঘাট আছে কিনা?
নিজের প্রতি সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সাথে মিলে মিশে বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে, এরকম অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও বেশ আলোচনা সমালোচনা চলমান বলেও জানান তিনি।










