টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গেল মাসখানেকের ভাঙনে ফসলি জমিসহ শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যদিও ভাঙনরোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সরেজমিনে উপজেলার কষ্টাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সত্তুর বয়সী বৃদ্ধা রেজিয়া বেওয়া তার দুই ছেলে ও ছেলের বউদের নিয়ে স্বামীর ভিটা রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘবছর ধরে রেজিয়া সেখানে বসবাস করে আসছে। গেল ৫ বছর ধরে যমুনা নদীতে অব্যাহত ভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে স্বামীর ভিটার অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে। স্বামীর রেখা যাওয়া বাড়ির স্মৃতি রক্ষার্থে বাকি বাড়ির জমিটুকু বাচাঁতে বস্তায় মাটিভর্তি করে সন্তান ও তাদের বউদের সাথে নিজেই কাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি যমুনা গর্ভে চলে গেছে। গোবিন্দাসী, অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইলে চারটি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এমন ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের পুরাতন জনপদ হিসেবে খ্যাত কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি ও ভালকুটিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভাঙনে কবলে তিনশ বছরের পুরাতন কালীমন্দিরসহ কয়েকটি বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, পোল্ট্রি খামার ও বহু বসতবাড়ি রয়েছে।
উপজেলার কষ্টাপাড়া গ্রামের রেজিয়া বেওয়া বলেন, বহু বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। বাড়ি থেকে নদী এক কিলোমিটার দুরে ছিল। কয়েক বছর ধরে যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে স্বামীর বসতভিটার অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে। স্বামীর স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখতে বাকি অর্ধেক বাড়ি রক্ষা করতে ছেলে ও তাদের বউদের সাথে বস্তার ফেলার কাজে সহযোগিতা করছি।
রেজিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম মনির বলেন, কয়েকবছর ধরে অব্যাহতভাবে নিজেদেরসহ বাড়িসহ আশপাশের অনেকের বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। জনপ্রতিনিধিরা দলবল নিয়ে এসে দেখে যায় আর আশ্বাস দেয়। কিন্তু তাতে কোন ফলাফল আসে না। নদী শুধু ভেঙেই যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাসরীন পারভীন বলেন, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে গোবিন্দাসী এলাকায় একটি প্রাইমারী বিদ্যালয়ের সামনে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এছাড়া অর্জুনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া ও কষ্টাপাড়া গ্রামের ভাঙনের কথা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডই ঠিক করবেন তারা কোথায় কোথায় কাজ করবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম এডভোকেট বলেন, গোবিন্দাসীর কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি ও ভালকুটিয়া এবং অর্জুনা ইউনিয়নের তাড়াইসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে যাতে দ্রæত ভাঙনরোধে কাজের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে (০১৩১৮২৩৬১১৮) একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।