২৫ অক্টোবর, নাগরপুর গনহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের বনগ্রামের রসুলপুর গ্রামে বর্বরোচিত হামলা করে হানাদার বাহিনী। হামলায় নিরীহ গ্রামবাসীসহ ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। বসত বাড়িতে করে অগ্নি সংযোগ । এতোসব ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েও ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
হত্যাযজ্ঞের পর হানাদার বাহিনী চলে গেলে গ্রামবাসীর সহয়তায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বনগ্রামে গন কবর দেয়া হয়। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনে শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযোদ্ধা, নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও গ্রামবাসীরা ছুটে যান এ গনকবরে।
বনগ্রাম শহীদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান জানান, ১৯৭১ সালের ২১ শে অক্টোবর বনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে গানবোট নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী বনগ্রাম আক্রমন করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১ জন মেজর সহ ৩ জন নিহত হয়। আর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শহীদ হন জেলার কালিহাতী উপজেলার নজরুল ইসলাম নজু, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম, আকতারুজ্জামান ও ওহাব আলী সহ ৭ জন। অবস্থা বেগতিক দেখে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটে স্ব স্ব ক্যাম্পে ফিরে যায়।
পরবর্তীতে পাক সেনারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ২৫ অক্টোবর রতে বনগ্রাম আক্রমন করে। মুহুর্মুহ গুলি ও অগ্নি সংযোগে বনগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে। আবালবৃদ্ধ, শিশু ও মহিলা কেউ রেহাই পায়নি হায়েনাদের হাত থেকে, হত্যা করে ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এবং ১২৯ টি বসতবাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে। পরে তাদেরকে একত্রে মাটি চাপা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরে ঐ স্থানটি বনগ্রাম গণকবর হিসেবে নাম করন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা আমির হমজা জানান, ১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ অক্টোবর কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত ভাবে বনগ্রাম গ্রামে হামলা চালায়। তারা গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে তোফাজ্জল হোসেন, নূরুল ইসলাম ও হাজী খোদা বকস্ সহ ৫৭ জনকে হত্যা করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেড়িয়ে গেলেও আজও বনগ্রাম গণ কবরের রাস্তাটি পাকা হয়নি। গনকবর সংরক্ষনের পাশাপাশি রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানান তিনি।