নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামিক ফাউন্ডেশন টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) চলতি দায়িত্ব মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠেছে।
এইসব অভিযোগ তিনি মুখে মুখে অস্বীকার করলেও অভিযোগের বিপক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণাদি দিতে পারেন নি তিনি।
অভিযোগ সমূহ :
জানা যায়, ডিডি মোহাম্মদ আলী ২০১৭ সনের ৬ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে যোগদান করার পর হতেই নানা অনিয়ম দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় কর্তৃক পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্কদের জন্য সহজ কোরআন শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক, সুপারভাইজার, ফিল্ড অফিসার, মাস্টার ট্রেইনার, মডেল কেয়ার টেকার, সাধারণ কেয়ার টেকার,নিয়োগ ও শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দূর্নীতি পরায়ন ডিডি মোহাম্মদ আলী টাঙ্গাইল অফিসে যোগদান করার পরপরই দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে টাঙ্গাইল শহরে কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ী নির্মাণ করেছেন।
তিনি তার আত্মীয়স্বজন ও এজেন্ট নিয়োগ করে টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন ও জনবল নিয়োগে প্রতিটি কেন্দ্র হতে ২৫/৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
তার আত্মীয়,পরিচিত ও এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন না করেই বছরের পর বছর সরকারী বেতনভাতা গ্রহন করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন।
আর তিনি তাদের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার তার নিকটাত্মীয়দের কেন্দ্র দিয়ে ওই সকল কেন্দ্রের অধিকাংশ কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও সরকারি সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রেখে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
ডিডি’র শ্যালিকা সেলিনা খান টাঙ্গাইল সদরের আমিনবাগ; শ্যালিকার জা তাসলিমা আমিনবাগে কেন্দ্র; শ্যালক জয়নাল আবেদীন প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্র গালার দায়িত্বে; তার মেয়ের বান্ধবীর বোন টাঙ্গাইল সদরের বয়স্ক কেন্দ্র; ডিডি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী কালিহাতীর ফটিকজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরির সুবাদে ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রীকে একটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয় যার কোন শিক্ষাগত সনদ নাই।
অন্যান্য অভিযোগ :
খালাতো বোন টাঙ্গাইল সদরের কাতুলী ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রের দায়িত্বে, ডিডি’র ফুপুর বাড়ী করটিয়ায় আলী আকবর নামে জনৈক ব্যক্তি একটি কেন্দ্র চালায়; ডিডি’র শশুরের পালিত মেয়ের ঘরের নাতনীকে দাইন্যা ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে।
ডিডি’র সহোদর ভাই ফারুক হোসেন গয়হাটা নাগরপুরে বয়স্ক কেন্দ্র দেয়া হয়েছে।
দেলদুয়ারের পাথরাইল চরপাড়া রাকিব হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে।
ফরিদ আহমেদ ভুরভুরিয়া পাথরাইল জেলখাটা আসামীকেও বেতন দেয়া হয়েছে।
তার আত্মীয় মাইজাল দেওলী দেলদুয়ার কোন প্রকার পাঠদান না করেই বেতনভাতা গ্রহন করছেন।
ডিডির বোন লিলি আক্তার কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন।
অনৈতিক চারিত্রিক অভিযোগ :
মির্জাপুর উপজেলার পেকুয়াতে জনৈকা শিক্ষিকার সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক থাকার খবর স্থানীয়ভাবে চাউর আছে।
মির্জাপুরে বুবলি নামে জনৈকা শিক্ষিকা জাল সনদে চাকুরী করছে।
এছাড়াও বাসাইল উপজেলায় মোস্তফা, এবাদত জসিমউদ্দিন, নুর হোসেনকে জাল সনদে টাকা নিয়ে চাকুরি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাসাইলে শিখা খান নামে এক শিক্ষিকা ডিডি’র সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে কেন্দ্র না চালিয়েই বহাল তবিয়তে আছেন।
টাঙ্গাইল সদরে পীরবাড়ী মক্তব কলেজপাড়া মিজানুর রহমানকে জাল সনদে চাকুরী দেয়া হয়েছে, তিনি ডিডি’র সোর্স হিসাবে পরিচিত।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডিডি অবসরে যাওয়ার প্রাক্কালে ২৫/৩০টি কেন্দ্র স্থগিত করে তার অনুগত এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে নতুন করে ওইসব কেন্দ্রে জনবল নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক জানান, তিনি প্রতিষ্ঠান ভিজিটের নামে শিক্ষকদের নিকট হতে ৪/৫ হাজার টাকা আদায় করছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার জন্য শিক্ষা উপকরণ ক্রয় ও বিতরণে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়ে গত ২২ ডিসেম্বর কথা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আলীর কথা হয় মুঠো ফোনে।
অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
এ সময় তিনি বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তার সকল তথ্য প্রমাণ আমি আপনাকে দিবো।
তিনি আরো বলেন, আপনি নিউজ করবেন না, আমি সবকিছুর প্রমাণ দিবো।
এরপর ৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হননি বা কোন যোগাযোগও করেন নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করে।
এরপর বিভিন্ন সময়ে ওই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক সহজ কুরআন শিক্ষা, সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৬ শত ৫০টি, মডেল রিসোর্স সেন্টার ১২ টি, সাধারণ রিসোর্স সেন্টারটি।