স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি হাবেল। মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রকার কাগজপত্র ও প্রমাণাদি থাকা সত্তে¡ও তিনি দীর্ঘ ৪৮ বছরে পাননি স্বীকৃতি। এর মধ্যে ২০০৫ সালে মারা যান হাবেল। পরবর্তীতে হাবেলের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পরিবার।
রেজাউল করিম (হাবেল) টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের হুগড়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়কার সকল কমান্ডারের স্বাক্ষরিত সব সার্টিফিকেট থাকা সত্তে¡ও মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম (হাবেল) ইউনিয়ন, সদর ও জেলা কমান্ডাররা তাকে চিনেন না বলে তার পরিবারকে জানান। সকল কাগজপত্র দেখে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সুপারিশ করেছেন টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম (হাবেল) এর ছেলে মো. ওমর ফারুক (৩৪) জানান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পিতার মুক্তিযুদ্ধের সকল কাগজপত্র সহ আবেদন করেছি। কয়েক বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরির পর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি যাচাই বাচাইয়ের জন্য টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গেলে সেখান থেকে জানানো হয় যে, তার বাবার যাচাই বাছাই হয়নি আবেদনটি “গ” সিরিয়ালে রয়েছে। এ বিষয়ে তারা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এতে তাদের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম-এর দরিদ্র পরিবার জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসন সহ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন যেন অতিদ্রæত মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম (হাবেল) কে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম জানান, তাদের আবেদন পেয়েছি। রেজাউল করিম (হাবেল) পরিবারের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে তাদের আবেদনও রয়েছে। যাচাই-বাচাই প্রক্রিয়াধীন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের রেজাউল করিম (হাবেল) ছাত্র জীবনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এস.এস.সি পাস করে চট্টগ্রাম জুট মিলে ড্রিলম্যান হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। এসময় তার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট হিসেবে ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয় কর্তৃক প্রদত্ত “স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র” এতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আঞ্চলিক অধিনায়কের স্বাক্ষর ও সীল রয়েছে। এছাড়াও “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর জিলা মুজিব বাহিনী, টাংগাইল” নামেও একটি সার্টিফিকেট রয়েছে। এতে টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান আলমগীর খান-এর স্বাক্ষর রয়েছে। পারিবারিক কারণে যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থানে পরিবার নিয়ে চাকুরীতে কর্মরত ছিলেন বিধায় তিনি তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেননি বা করতে পারেননি। দীর্ঘদিন চাকুরীতে থাকার পর ২০০০ সালে কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেলে নিজ গ্রামের বাড়ী ফিরে এসে বসবাস করা কালীন ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার সন্তানরা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় পিতার নাম অন্তর্ভূক্ত করার আশায় কাগজপত্র নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।