নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করায় আবারও তীব্র ভাঙ্গন কবলে পড়েছে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার কাকুয়া ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।
গত এক সপ্তাহে প্রায় মসজিদ মাদ্রাসাসহ পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্র্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছে ভাঙ্গন কবলিতরা।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
অব্যাহত ভাঙ্গনে ককুয়া ইউনিয়নের জিদাও গোপ, গয়লা হোসেন, ঢেকিয়া বাড়ি, রাজ নগর, গোপালকেটি, কালিকেটি, শর্মা কেটি, দেব গয়লা, বার গয়লা, মুকন্দ গয়লা, সেটেল পাড়া মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে।
আর হারিয়ে যেতে বসেছে ওমরপুর, চর পৌলী, বানাকুড়া, কাকুয়া, হগড়া গয়রাগাছা, চকগোপাল, কাতুলি গ্রাম।
অন্যদিকে মাহমুদনগর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডটি বিলীন হয়েছে গত বছরের ভাঙ্গনে।
এবছরের ভাঙ্গনে ৫, ৬ ও ৮ নং ওয়ার্ডের অর্ধেক করে নদী গর্ভে চলে গেছে।
এতে করে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের প্রায় ১৫শ’ মানুষ গৃহহীন হয়ে গেছে।
দুই ইউনিয়নের এই গৃহহীন কিছু মানুষ অন্যত্র চলে গেছে।
আর বাকিরা খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
কাকুয়া ইইনিয়নের ডাক্তার নুরু বলেন, “আমার বাবার প্রায় ৮০ বিষা জমি ছিল। যমুনা নদীর ভাঙ্গনে আমাদের কিছুই রইল না।
ছোট সময় থেকে শুনে আসতেছি এই নদীতে বাঁধ হবে।
এক্ষন ত আমাদের সব শেষ আর বাঁধ দিয়ে কি অইবো? প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে কুলাতে পারছে না।”
বাড়ী ভাঙ্গা আবু তালেব বলেন, ভাঙ্গনের তীব্রতা এতো বেশি যে ঘর বাড়ি সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাচ্ছি না।
এই মুহুর্তে আমাদের জন্য সাহায্যর হাত বাড়ানো উচিত সরকারের।
এসময় তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, নদী যত ভাঙ্গবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীদের তত লাভ। বস্তা ফালায় ১টা হিসাব হয় ১০টার।
জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষ যা বললেন –
এব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও যমুনা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে।
গত ৭ দিন হলো প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সেই সাথে ভেঙ্গে গেছে আমার ইউনিয়নের শতাব্দী প্রাচীন চরপৌলী এলাকার একটি মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কবরস্থান।
এমন ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষজন।
এসময় তিনি আরো জানান, এ বছরের অব্যাহত ভাঙ্গনে সাড়ে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নীচে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।
এব্যাপারে মাহমুদনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাজেদ তালুকদার বলেন, ভাঙন কবলিত মানুষ ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তবে এখনো পর্যন্ত ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায় বা অস্থায়ী কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
যদিও তারা বলছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা।
এবিষয় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এই অঞ্চলের মানুষকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা হবে।