উত্তরবঙ্গের সাড়ে তিন কোটি মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ উদ্বোধন হচ্ছে যমুনা রেল সেতু। নতুন এই সেতুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ আরও দ্রুত ও উন্নত হবে। আধুনিক দুই লেনের এ সেতুটি রেল চলাচলে গতি আনবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উন্নত স্টিল প্রযুক্তিতে নির্মিত ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুটি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যদিও সেতুটি দুই লেনের হলেও দুই প্রান্তে সিঙ্গেল লেন থাকায় পুরোপুরি সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে সেতু পারাপারের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। যেখানে আগে ট্রেন পার হতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগত, এখন তা মাত্র ৩ মিনিটে সম্ভব হবে।
এই সেতুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, একযোগে দুই দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে, যা আগে সম্ভব ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক মালবাহী ট্রেন চলাচলের সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের ১৭০ কিলোমিটার পথে চলাচলকারী ৪০টি আন্তঃনগর, ছয়টি আন্তর্দেশীয় এবং ১৮টি মালবাহী ট্রেনকে আর সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ে থেমে থাকতে হবে না। ফলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য আরও দ্রুত দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানান, সেতুর দুই প্রান্তের সিঙ্গেল রেলপথ ডাবল লাইনে রূপান্তরের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন পার হতে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লাগত, সেখানে নতুন যমুনা রেল সেতু দিয়ে মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিট লাগবে। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলতে পারবে।”
যদিও দুই প্রান্তের সিঙ্গেল ট্র্যাকের কারণে পুরো সুবিধা পেতে কিছুটা সময় লাগবে, তবুও নতুন সেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।