বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে বলে সোমবার (৮ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ জানিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বাজারে বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশকে শুল্ক আরোপের চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং সামনে আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করা হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকসহ সব পণ্য এখন শীর্ষ বাজারে বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশের বেশি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য যায়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন শুল্ক আরোপে এই হার দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যেতে পারে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, যেসব কারখানার অর্ধেকের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়, তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এই শুল্ক তুলনামূলক কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম এ অবস্থায় আরও সুবিধাজনক অবস্থানে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ট্রাম্প তার চিঠিতে জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে বর্তমান শুল্কের সঙ্গে আরও শুল্ক আরোপ করা হবে। পাশাপাশি শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যদি কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন করে, তবে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না।
এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৯ জুলাই আরেক দফা বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা অভিযোগ করেছেন, শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষির প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় বিকল্প বাজার ও নতুন গন্তব্যে রপ্তানি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান, বৈচিত্র্য ও প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি, গম, তুলা ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্য আনার চেষ্টা চলছে। তবে চূড়ান্ত শুল্কের আগে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতার আশা করছেন তিনি।