টাঙ্গাইলে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে আজ। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এই হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর মাধ্যমে টাঙ্গাইলের আলোচিত এ মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে এসে গেছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল হাসানের আদালতে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
পূর্বের ঘটনাবলী –
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের কলেজ পাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
ওই ব্যক্তিদের জবানবন্দিতে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান, তাঁর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খানের নাম বলেন।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি খান পরিবারের চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন ডিবির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতেও হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা উঠে আসে।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের মন্তব্য –
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা এবং কয়েকজন আসামি ও সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে শোনান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন যে আসামিরা দোষী। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন আদালতে।
রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর প্রায় দেড় ঘণ্টা আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আসামিপক্ষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাজী মাহাবুবসহ পাঁচজন আইনজীবী অংশ নেন। তাঁরা আদালতকে জানান, মামলার এজাহারে আসামিদের নাম ছিল না। তাঁদের সন্দেহও করা হয়নি। পুলিশ নির্যাতন করে কয়েকজন আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। পরে ওই আসামিরা জবানবন্দি প্রত্যাহারেরও আবেদন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের দিয়ে আসামিদের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা আদালতে আসামিদের খালাস চেয়েছেন। এরপর আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।