টাঙ্গাইল হাসপাতালে মিলছেনা সরকারিভাবে দেয়া বিনামূল্যের র্যাবিস্ ভ্যাকসিন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীসহ স্বজনরা।
কেউ কেউ একটি বা দুটি বিনামূল্যের ভ্যাকসিনের ডোজ পেলেও গত দুইদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে এর সরবরাহ।
হঠাৎ করে র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের সংকট নিয়ে রোগীদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে রোগীর চাপ বাড়ায় দায়িত্বরতরা ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকার অজুহাত দিয়ে ওষুধ বিক্রেতাদের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্বজনদের।
রোববার এ চিত্র দেখা গেছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ ক্লিনিক ভবনে স্থাপনকৃত র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিতরণ কক্ষে।
দেখা গেছে, এ ভবন চত্বরে শিশু, নারী ও পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী প্রায় দুই শতাধিক রোগী ও স্বজনদের।
বিনামূল্যের ভ্যাকসিন না থাকায় হতাশ আগত রোগী ও স্বজনরা।
কেউ কুকুর আবার কেউ বিড়ালে কামড় বা খামচির শিকার।
সরকারি বিনামূল্যের ভ্যাকসিন না থাকার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি কোম্পানীর ভ্যাকসিন ওই ভবন চত্বরেই বিক্রির কাজ করছেন ওষুধ বিক্রেতার কয়েকজন প্রতিনিধি।
চারজনের এক একটি গ্রুপ মিলিয়ে একটি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন ও চারটি সিরিঞ্জ প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য সাড়ে পাঁচশ টাকায়।
যদিও ভ্যাকসিনের গায়ে সর্বোচ্চ মূল্য লেখা ৫’শ টাকা আর পাঁচ টাকা মূল্যের এক একটি সিরিঞ্জের দাম নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা।
ভূক্তভোগীদের আক্ষেপ –
ভূক্তভোগী ফাতেমা জানান, গত ১১ ডিসেম্বর আমার দুই বছরের বাচ্চাকে বিড়ালে খামচি দেয়।
১২ ডিসেম্বর এখান থেকে বিনামূল্যে প্রথম ডোজটি দিয়েছি। এভাবে তিনটি ডোজ দেয়ার তারিখ লিখে দেন কর্তব্যরত নার্স।
আজকে আমার বাচ্চার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দিন। এসে শুনি সরকারি ভ্যাকসিন সরবরাহ নাই।
বাধ্য হয়ে জনপ্রতি ১৩৫ টাকা ভাগ করে দিয়ে একটি ভ্যাকসিন কিনে আমরা চারজনের বাচ্চাকে দিয়েছি।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের ভ্যাকসিন নেই এটা কি বিশ্বাসযোগ্য।
রুবী আক্তার নামের এক রোগীর স্বজন জানান, দুটি ডোজ বিনামূল্যে পেয়েছি।
আজকে এসে শুনি ভ্যাকসিন নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকা এক ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে বাচ্চাকে শেষ ভ্যাকসিনটি দিতে হলো।
সরকারি ভ্যাকসিন হঠাৎ উধাও হলো, নাকি বাড়তি সুবিধা নিতে দায়িত্বরতরা না থাকার এই অজুহাত সাজিয়েছেন।
নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম জানান, বরাদ্দকৃত সরকারি ভ্যাকসিন শেষ হওয়ায় রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
ভবনের বাইরে যে ভ্যাকসিন বিক্রি করছে সে আমাদের কেউ নন।
তাকে এই ভবন চত্বরে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতি না দেয়াসহ কোন বাড়তি সুবিধা তারা নিচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।
দালাল আর বহিরাগত ওষুধ বিক্রেতাদের বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, এরআগে কয়েক দফায় পুলিশের হাতে আটকও হয়েছে তারা।
অপর দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রিজিয়া জানান, এ বছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন সময়ের আগেই শেষ হয়েছে।
কর্তৃপক্ষকে ভ্যাকসিনের চাহিদা দেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সরকারি ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিতরণে সমস্যা হচ্ছে।
প্রতি সপ্তাহে আমরা যে পরিমানের চাহিদা দিই, সেই পরিমানের ভ্যাকসিন আসেনা। সরকারি ভ্যাকসিন আসলেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ভিতরে দালাল বা বাইরের ওষুধ বিক্রেতাদের বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ কেউ বিক্রি করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।