বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলা শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজাকারের ছেলে বলে গালি দেয় ওই বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান। তখন ছাত্রদের তোপের মুখে পড়ে ওই শিক্ষক। পরে ওই শিক্ষক কৌশলে ৫ মাসের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে গা ঢাকা দেয়। মঙ্গলবার ছুটির মেয়াদ শেষে ওই শিক্ষক পুনরায় বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষক কামরুজ্জামানকে বিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবি জানায়। বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুয়াজ বলে, শিক্ষক কামরুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যখন আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নেই, তখন তিনি আমাদের প্রকাশ্যে রাজাকারের ছেলে বলেছেন।
ওই শিক্ষককে আমরা বিদ্যালয়ে আর দেখতে চাই না। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষকের বিদ্যালয় থেকে অপসারণ চাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জোবায়ের শাহাদাত মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, শিক্ষক কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগের দোসর।তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজাকার পুত্র বলে অপরাধ করেছেন। তার শুধু অপসারণ নয়, আমরা তার শাস্তি চাই। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক কামরুজ্জামান রাজাকার পুত্র বলেছেন- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই সময়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লার নির্দেশে ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিক উপপরিচালক, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চল, রংপুর বরাবর দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে।কিন্তু গত ৫ মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষক ওই জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ৫ মাসের দীর্ঘ ছুটি নেয়। ছুটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি পুনরায় বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা তার অপসারণের দাবিতে আবারও আন্দোলন করেছে।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার কালবেলাকে জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর জেনেছি। তবে এখনো শিক্ষার্থীরা কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।