নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল পৌরসভা ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। এই পৌরসভার আয়তন ২৯.৪৩ বর্গ কি.মি. (১১.৩৬ বর্গমাইল)। মোট জনসংখ্যা ১,২৮,৭৮৫ জন।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোন পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নাই।
পৌরসভার ভিতরে এসপি পার্ক ও ডিসি লেক নামে ২টি বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও একটিও পৌরসভার নয়। একটিও শিশু বা কিশোরদের জন্য নয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় –
শহরের আকুরটাকুর পাড়া মৌজায় ৬৬ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত জমি ১৯৭২ সালে তৎকালিন গণপরিষদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাৎসরিক ভাড়ায় ইজারা নেন।
১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভাড়া পরিশোধ করতেন। এক পর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ওই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন।
মামলায় নিম্ন আদালতে তিনি ডিক্রি পান। সরকার পক্ষ জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লিপ-টু আপিল করেন।
ওই সিভিল ডিভিশন মামলায় সরকার পক্ষে রায় দেন আদালত। পরে লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের পক্ষে রায় দেন।
টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রস্থলে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধারকৃত ৬৬ শতাংশ এই জমিতে উদ্ধারকৃত জমিতে টাঙ্গাইল পৌরসভা কাঁচাবাজার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এলাকাবাসী ওই জমিতে পার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
তাঁরা সেখানে বাজার স্থাপন না করে পার্ক নির্মাণের দাবিতে ৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এরপর জমিটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে ইজারা দেওয়া হয়। পৌরসভা সেখানে কাঁচাবাজার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই জায়গায় ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত শেড নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে এই লকডাউনের মধ্যেও তড়িঘড়ি করে এই উন্মুক্ত শেড নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান –
বটতলা বাজারটি সদর সড়কের পাশে স্থানান্তর করা হলে আরও বেশি অসুবিধার সৃষ্টি হবে। সেখানে পার্কিং ব্যবস্থা নেই।
ফলে বাজারে মালামাল আনা-নেওয়ার গাড়ি এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের গাড়ি এলে সদর সড়ক এবং উত্তর পাশে তালতলা সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকবে।
এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় কাঁচাবাজার হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই সেখানে পার্ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তারা আরো জানান, পৌরসভার সাথে হাত মিলিয়ে বেশ কিছু দালাল শ্রেণীর লোক এটাকে পুঁজি করে একটি দোকান বরাদ্দ বাণিজ্য করার পায়তারা চালাচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে বাজার স্থাপন হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে, জনভোগান্তি বাড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পশ্চিম প্রান্তে দোকান নির্মাণকাজ চলছে। দোকানের প্রাচীর ৩-৪ ফুট করে উঠে গেছে। অন্য প্রান্তে মাটি সমানকরণের কাজ চলছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি জানান, জমিটি উদ্ধার করার পর সেখানে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল।
কিন্তু পার্কটি বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ রাসেলের নামে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’ করার ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পরদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিএস-১ সালাউদ্দিন সাহেব পিএম এর অনিহার কথা জানান।
এসময় তিনি আরো জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জমিটিতে পার্ক স্থাপন না করে অন্য কোনো জনস্বার্থে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
এ ছাড়া অর্পিত ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি সরকারি কোনো দপ্তরকে স্থায়ীভাবে দেওয়ার বিধান নেই।
এ ছাড়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উদ্ধারকৃত জায়গাটিতে বটতলা বাজার স্থানান্তরের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
পরে অস্থায়ীভাবে শর্ত সাপেক্ষে পৌরসভাকে জমিটি বার্ষিক ভাড়ায় ইজারা দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক উদ্ধার হওয়া জায়গাটি পৌরসভাকে বার্ষিক ভাড়ায় ইজারা দেয়।
জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিভাবে বটতলা কাঁচাবাজারটি ওই জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর সেই বাজারের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে আর তাদের কাছ থেকেই প্রকৃত খরচের টাকা গ্রহণ করে হবে।
কোন প্রকার দালালদের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ করা হবে না। সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত ২টা টয়লেট, গোসল খানা, আরসিসি রাস্তা, মানসম্মত ও পরিচ্ছন্ন কাঁচাবাজার স্থাপন করা হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার