টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা আক্তার (৬৭) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার আন্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এদিন বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা প্রশাসন তাকে গার্ড অব অনার দেয়।
এশার নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এম এ গনি উপজেলার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৭১ সালে উপজেলার বহেড়াতৈল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের রান্নাবান্না ও সেন্ট্রির দায়িত্ব পালন করেন ফাতেমা। যুদ্ধকালীন সখীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচটি কোম্পানি গড়ে ওঠে। তখন বিভিন্ন ক্যাম্পে খবর আনা-নেওয়া ও চিঠি আদান-প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফাতেমাকে।
কেউ যেন বুঝতে না পারে এ জন্য তাকে ছেলেদের কাপড় পরানো হতো। চুলও কাটা হয়েছিল ছেলেদের মতো করে। স্বাধীনতার পর সামাদ নামের প্রতিবেশী এক যুবককে বিয়ে করেন ফাতেমা। বিয়ের কয়েক বছর পর চার সন্তানসহ ফাতেমাকে ফেলে চলে যান সামাদ। শুরু হয় ফাতেমার কষ্টের জীবন। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতেন ফাতেমা। এরপর সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন সখীপুরে। বিয়ে করেন মোবারক নামের এক ব্যক্তিকে। দুজনই চাকরি নেন পৌরসভার সুইপার (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে। অন্যের জমিতে একটি ছাপরা ঘর তুলে থাকতেন তারা। কিছুদিন যেতে না যেতেই মোবারক তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান।
আবার শুরু হয় ফাতেমার কষ্টের জীবন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এম এ গনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় (এরশাদ সরকারের সময়) পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠে ফাতেমার। তিনি সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সর্বশেষ পৌর শহরের উত্তর পাশে আন্দি এলাকার বনের জমিতে ছিল তার বর্তমান ঠিকানা।