স্টাফ রিপোর্টার : সরকার নদীপাড়ের মানুষের যানমালের রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করে বা নদীর পাড়ে মাটি ফেলে পাড় সংস্কার করে; কিন্তু একশ্রেনির মাটি বা বালুখেকো সেই বাঁধও কেটে বিক্রি করে।
বুড়িগঙ্গা নদী খনন ও পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদীর বাম তীরে কালিহাতী উপজেলার বিনোদ লুহুরিয়া, কুর্শাবেনু ও কদিমহামজানী মৌজার ১৬৮ একর ভ‚মি পানি উন্নয়ন বোর্ড পুনরুদ্ধার করে।
ওই প্রকল্পে অবাধ পানি প্রবাহ সৃষ্টিতে পাউবো ওই এলাকায় আরও ৩৪ দশমিক ১৯ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ করে।
কিন্তু গত বর্ষায় নিউ ধলেশ্বরী নদীতে পলি জমে চর জেগে উঠায় পাউবো ওই ভ‚মিতে ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়।
বিনোদ লুহুরিয়া মৌজায় গত ২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার (বর্তমানে মন্ত্রী পরিষদ সচিব)।
কিছু এলাকায় বিভিন্ন জাতের দুই হাজার ৮৬০টি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপন করা হয়।
ওই সময় সিনিয়র সচিব হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের কোন মূল্যেই ছাড় দেওয়া হবে না।
জবরদখলকারী হাজারী বা মনি যার লোকই হোন না কেন; অবৈধ হলে তাকে ছাড় দেওয়া তো দূরের কথা, আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে’।
এরপরই মধ্যে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ১৩.৬ কিলোমিটার এলাকা চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
মাটি-বালু না পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের স্মরনাপন্ন হয়।
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পাউবোর পুনরুদ্ধার ও অধিগ্রহণকৃত ভূমি থেকে মহাসড়ক উন্নয়নে মাটি দেওয়ার প্রয়াস পায়।
সরেজমিনে যা জানা যায় :
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আ’লীগ নেতা জহুরুল ইসলাম, চান মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল বাছেদ, গোলজার হোসেন, ইউসুফ আলী, মাসুদ রানা ও নুরুল ইসলামের (মেম্বার) নেতৃত্বে কুর্শাবেনু ও কদিমহামজানী মৌজার নিউ ধলেশ্বরী নদী পাড় ও পাশে নদীর আকারে মাটি-বালু কেটে সমান্তরাল একটি কৃত্রিম নদী সৃষ্টি করে ফেলেছে।
ফলে নিউ ধলেশ্বরী নদীর মুখ (অফটেক) থেকে ডান ও বাম তীরের ১৯টি গ্রামে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুর্শাবেনু গ্রামের কামরুল, বেলাল হোসেন, কদিমহামজানীর নওজেস আলী, শরীফুল, রিপন সহ আরও অনেকে নাম প্রকাশ না করে জানান, বালু ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়না।
প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে নির্যাতন সহ নানা রকম হয়রানী ও মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়।
মূলত বালু ব্যবসায়ীরা উন্নয়নের কথা বলে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু-মাটি উত্তোলন ও সরবরাহ করছে।
এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।
এছাড়া নদী তীরের ওই স্থানগুলো দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করতে পারেনা।
তবে অধিকাংশ সময়ই প্রতিবাদকারীদের টাকার লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।
যারা কথা না শোনে তাদেরকে ভিন্ন পন্থায় শায়েস্তা করা হয়।
টাঙ্গাইল পাউবোর একটি সূত্র জানায়, ওই এলাকার ঘরে ঘরে বালু ব্যবসায়ী। তারা অধিকাংশ সময় পাউবোর ভূমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করে থাকে।
পাউবোর পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক বাণী দেওয়া হলেও তারা কর্তপাত করেনা।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েও সময়মত বা প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায়না।
এজন্য বেশিরভাগ সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয়না।
গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ ও সল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জানান, নদী কেটে কেউ বালু-মাটি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বিক্রি করছেন এমনটা তারা জানেন না।
অনেকে নিলামকৃত বালু বিক্রি করেছেন। সেগুলো ড্রেজারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে।
নদীর পাড় কেটে মাটি-বালু বিক্রি করলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেবে এটা নিশ্চিত।
পাউবো কর্তৃক পুনরুদ্ধারকৃত ভ‚মি কেটে মাটি-বালু বিক্রি করছে এমন কোন খবর তারা জানেন না।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড যা বলে :
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে কিছু জানেন না। পাউবোর সম্পত্তি রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ওই সম্পত্তিতে মাটি-বালু কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
কেউ দখল বা ভোগদখল করলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি পাউবোর ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমদাদুল হককে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রকাশ, বুড়িগঙ্গা নদী খনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় বিনোদ লুহুরিয়া মৌজায় পুনরুদ্ধার করা ১৬৮ একর ভ‚মি ও অধিগ্রহণকৃত ৩৪ দশমিক ১৯ একর ভ‚মিতে বাপাউবো বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন জাতের দুই হাজার ৮৬০টি ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হয়।