নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাঁপাকে গণসংবর্ধনা প্রদানের আয়োজন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অতিথি করা হলেও অতিথি করা তো দুরের কথা কিছুই জানানো হয়নি স্থানীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাককে।
এবিষয়ে আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীরা জানিয়েছেন দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের না জানিয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
অপরদিকে আয়োজকরা জানিয়েছেন, আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা মধুপুর ও ধনবাড়ীতে তার বিরোধীরা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহারকে সামনে রেখে সুসংঘটিত হতে চাইছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নিজের ক্ষমতা ও বাহুবল বৃদ্ধি করার জন্য দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র যা বলছে –
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক ও শামসুন নাহারের বাড়ি।
আব্দুর রাজ্জাক ২০০১ সাল থেকে ৫ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
দুইবার মন্ত্রীও হয়েছেন। দুই উপজেলাতেই তার দলের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুু দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী হন।
এনিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার দূরত্ব তৈরি হয়।
মনোনয়ন না পেয়ে ছরোয়ার আলম খান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি। তবে
তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন।
আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলীকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেন।
প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ইয়াকুব আলী জয় লাভ করেন।
মধুপুরে আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিত প্রার্থী ইয়াকুব আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও ধনবাড়ীতে তার সমর্থিত প্রার্থী হেরে যান।
ধনবাড়ী উপজেলায় আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান পদে হারুনার রশিদ ওরফে হীরাকে প্রার্থী করেন। হীরা আব্দুর রাজ্জাকের খালাত ভাই।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার ওরফে সবুজ।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনসহ আরো তিনজন আওয়ামী লীগের নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তারা সবাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরোধী।
স্থানীয় নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
অপরদিকে আব্দুর রাজ্জাক এবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রী পরিষদে স্থান পাননি।
এরপর থেকেই মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজ্জাক বিরোধী চাঙ্গা হয়ে উঠেন।
তারা শামসুন নাহারকে সামনে রেখে এলাকায় রাজ্জাক বিরোধী একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
এর অংশ হিসেবেই শনিবার ধনবাড়ীতে শামসুন নাহারের গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
এই সংবর্ধনার মধ্যদিয়ে এই অংশের নেতাকর্মীরা বড় ধরনের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
দুই পক্ষের নেতারা যা বললেন –
এই সংবর্ধনা সম্পর্কে সদ্য বিদায়ী ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হারুনার রশিদ জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো গঠিত হয়নি।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই সদস্য দিয়ে চলছে ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ।
তারা দুইজন উপজেলা আওয়ামী লীগের কারো সাথে কোন পরামর্শ না করে এ সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন; এর মধ্যদিয়ে তারা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
হারুনার রশিদ অভিযোগ করেন, সংবর্ধনার নামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শামসুন নাহার ধনবাড়ীর কৃতীসন্তান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কেউ খুশি হয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কিছু দিলে সেটাকে কি চাঁদাবাজি বলা যাবে?
দলে বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি তৈরির অভিযোগে তিনি বলেন, মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তিনি উপজেলা সহ জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি করেছেন নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে; এই বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ।
আব্দুর রাজ্জাক বিরোধী অংশের নেতা বিগত ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে রনি বলেন, গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান যাতে সফল না হয়; সেজন্য আব্দুর রাজ্জাকের লোকজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংবর্ধনা আয়োজন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, শামসুন নাহার কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য।
সেদিক থেকে সংবর্ধনা আমাকে অতিথি করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওই সভায় আমার না যাওয়ার কোন কারণ নাই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে সংবর্ধনা সভায় অতিথি না করার প্রসঙ্গে জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, উনারা দুইজনেই কেন্দ্রীয় নেতা। উনারাই সেটা জানেন।