আদালত প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে সাবেক স্বামীকে ফাঁসাতে স্ত্রীর দায়ের করা চেক জালিয়াতির মামলায় স্ত্রীকেই কারাগারে পাঠিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সাবেক স্ত্রী মোছা নাসরিন সুলতানা (তাহমিনার) বিরুদ্ধে সমন জারী হয়।
সমন পেয়ে আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ধনবাড়ী উপজেলা ধনবাড়ীর মৃত আঃ গনি মিয়া’র মেয়ে মোছা. নাসরিন সুলতানা (তাহমিনা) ধনবাড়ী উপজেলার হলুদিয়া গ্রামের মৃত নওয়াব আলীর ছেলে নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৭৫ লাখ টাকার দাবিতে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে নাসির চেক ডিজঅনারের মামলার নোটিশ হাতে পেয়ে বুঝতে পারেন যে, নাসরিন তার সাথে প্রতারণা করে ব্যাংক চেকে ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
তখন নাছির সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল বিজ্ঞ সিনিঃ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে চেক প্রতারণার অভিযোগ এনে দন্ডবিধির আইনের ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলা করেন।
আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে এ তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
গত মাসে পিবিআই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনটি জমা দেয়ার পর আদালত নাসরিনের নামে সমন জারি করেন।
নাসরিন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে দীর্ঘক্ষণ শুনানী শেষে আদালত নাসরিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. মনিরা সুলাতানা তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
মামলায় প্রকাশ –
বাদী নাছির উদ্দিন ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি মধুপুরে ইউসিসি ইউনিভার্সিটি কোচিং সেন্টার খুলে ওই কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন।
ওই সময় নাসরিন সুলতানা কোচিং সেন্টারের ছাত্রী ছিলেন।
কোচিং সেন্টারে উভয়ের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠায় ১১/০১/২০০৮ ইং সালে সালে তারা বিয়ে করেন।
তাদের সংসার জীবনে বিরোধ বা কলহ ছিল না। নাছির ভীষণ ভালবাসতো নাসরিন সুলতানাকে।
তালাক দেয়ার কয়েকদিন আগে ধনবাড়ীর এক ছেলে নাসরিনের সাথে তার কিছু ঘনিষ্ট ছবি এবং তাদের মধ্যে অনৈতিক অশ্লীল কথাবার্তা অডিও রেকর্ড করে নাছিরের নিকট পাঠায়।
তখন নাছির জানতে পারেন ওই ছেলের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক।
ওই কলহ নিয়ে তাদের সংসার জীবনে নানাবিধ ঝামেলার সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে গত ২০১৯ সালের ১১ মে তারিখে নাছির তার স্ত্রী নাসরিনকে আইনগত ভাবে তালাক প্রদান করেন।
নাসরিন তালাকের নোটিশ পেয়ে কিছুদিন পর নাছির উদ্দিনকে ফাঁসানোর জন্য নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (নং- ২২২/১৯) দায়ের করেন।
পরবর্তীতে মামলাটি পর্যায়ক্রমে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন –
পিবিআই এবং সিআইডি’র তদন্তের পর নাসরিন সুলতানার আনীত অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বিজ্ঞ আদালত (নং- ২২২/১৯) মামলাটি খারিজ করে দেন।
জানা যায়, সালের ১১ নভেম্বর নাছির উদ্দিন ও নাসরিন সুলতানার সাথে পারিবারিক ভাবে রেজিষ্ট্রি কাবিনমূলে বিবাহ হয়।
বৈবাহিক বন্ধন ও বিশ্বাসে তার নিকট নাছির উদ্দিন তার টাকা-পয়সা এবং চেক বই গচ্ছিত রাখেন।
সেই সুযোগে নাসরিন নাছির উদ্দিনের স্বাক্ষরবিহীন চেকের পাতা আগে থেকেই তার কাছে রেখে দেয়।
পরে ওই চেকে জাল স্বাক্ষর দিয়ে ৭৫ লাখ টাকার অংক বসিয়ে চেক ডিজঅনারের মামলা করে সাবেক স্বামীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
সাবেক স্বামী নাছির উদ্দিন ৭৫ লাখ টাকার মামলার নোটিশ পেয়ে সাবেক স্ত্রী নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। সম্পাদনা – অলক কুমার