কালিহাতী প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার ১৩ দিন পর পুলিশ মামলা নিলেও ধর্ষিতার মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা।
ঘটনাটি ঘটেছে কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের ছাতিহাটি চকপাড়া গ্রামে।
ধর্ষিতা ও তার পরিবারের কথা :
ধর্ষিতা ওই স্কুল ছাত্রী জানান, নভেম্বর মাসের ২ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে ৮টায় আমাকে বাড়ি থেকে ছাতিহাটি চকপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাসিব (২৫) ও আয়নালের ছেলে রিপনসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জন একটি সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে অন্যান্যদের সহযোগিতায় হাসিব একাধিকবার ধর্ষণ করে।
ধর্ষণ শেষে ওইদিন রাত ৩টার দিকে তারা আমাকে আমার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়।
পরে আমার ডাক চিৎকারে আমার মা-বাবা এগিয়ে আসলে বিষয়টি কাউকে জানাইলে সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এবিষয়ে ওই স্কুলছাত্রীর মা জানান, ঘটনার পরদিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন, ইউপি সদস্য বাবু খান ও মহিলা ইউপি সদস্য মলিনা বেগমকে জানাই।
পরে কালিহাতী থানায় ছাতিহাটি চকপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাসিব, আয়নালের ছেলে রিপন, মুনায়েম হোসেনের ছেলে আয়নাল ও নুরু মিয়ার ছেলে ফারুক সহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দেই।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালিহাতী থানার এসআই আলামিন এলাকায় তদন্তে এসে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে বলে চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে আপোষ করে ফেলেন।
পরে চেয়ারম্যান আমাকে মহিলা ইউপি সদস্য মলিনা বেগমের বাড়ীতে ডেকে নিয়ে ছেলে পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আপোষ নামায় জোরপূর্বক আমার সাক্ষর নেন।
এবিষয়ে ওসিকে জানালে তিনি মামলা নিতে গড়িমসি করে।
এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বিভিন্ন মহলের চাপের কারনে ঘটনার ১৩ দিন পর গত ১৫ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলামিনের পরিবর্তে এসআই কামরুলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পরে মামলা গ্রহণ করে আমার মেয়েকে মেডিকেল করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে আমার মেয়ে অসুস্থ বলে পুলিশ ৭ দিন পর মেডিকেল করার জন্য আসতে বলে। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
আসামিদের লোকজন মামলা তুলে নিতে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চলছে।
পরের ঘটনা :
অপরদিকে ঘটনার ২১ দিন অতিবাহিত হলেও ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রীকে মেডিকেল না করায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে।
তাঁরা মনে করছেন এটি একটি ধর্ষনের আলামত নষ্ট করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। তাহলে কি এদেশে গরীরের বিচার নেই।
এবিষয়টি ধর্ষিতার মা গত রোববার (২০ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারকে অবগত করলে তিনি ওসিকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশের বক্তব্য :
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি পাইকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন স্বীকার করেন।
এসময় তিনি বলেন, জরিমানার টাকা ১০ তারিখে দেওয়ার কথা থাকলেও জানতে পারি তারা থানায় মামলা করেছেন।
এজন্য টাকাগুলো আর দেওয়া হয়নি। পরে আমি বিষয়টি ওসি এবং এসআই আলামিনকে জানাই।
কালিহাতী থানার এসআই আলামিন আপোষ মিমাংসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটা আপোষ যোগ্য অপরাধ নয়।
আইনগতভাবে আপোষ করার কারও কোন এখতিয়ার নেই।
কালিহাতী থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, প্রথমে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার থানায় হুমকির অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় পুলিশ পাঠাই। পরবর্তীতে স্কুল ছাত্রী বলে আমাকে ধর্ষণ করেছে।
আমরা সেই ধর্ষণের বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা নেই।
আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং ওই স্কুলছাত্রীকে মেডিকেল করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা – অলক কুমার