কালিহাতী সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (জগ মার্কা) বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় পাল্টা হামলায় আওয়ামী লীগের এক সমর্থক আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাত ১০টার দিকে পৌর সভার চিনামুড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে এলেঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পোষ্টার ছেঁড়ার অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রাথী মো. শাফী খানের মহেলা এলাকায় গণসংযোগে বাঁধা দেয় নৌকার সমর্থকরা।
পরে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাফি খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
পথিমধ্যে ফের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নৌকার সমর্থকরা হুমকি দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী চিনামুড়ায় নিজ বাড়ি গেলে সেখানে নৌকার প্রার্থীসহ সমর্থকরা মিছিল নিয়ে যায়।
বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে বাড়িতে আক্রমনের চেষ্টা চালায় তারা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তা প্রতিহত করে।
পরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা পাল্টা মিছিল বের করেন।
মিছিলটি চিনামুড়া মোতালেব খানের চায়ের দোকানে পৌঁছালে নৌকার সমর্থক আওয়াল পীরকে একা পেয়ে মারপিট করে তারা।
বর্তমানে তিনি কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় চিনামুড়াসহ আশেপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ও উভয় পক্ষের সমর্থকদের সাক্ষ্য –
চায়ের দোকানদার মোতালেব খান জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাফি খানের একটি মিছিল আমার দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আওয়াল পীর দৌড়ে এসে আমার দোকানে আশ্রয় নেয়।
পরে আমি দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে দিয়ে তাকে রক্ষা করি। মিছিল চলে যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে নিয়ে যায়; তাকে কে বা কারা মারপিট করেছে আমি তা দেখিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী মিনা আক্তার জানান, শাফি খানের মিছিলটি তার বাসার সামনে লাগানো নৌকার প্রার্থী নুর-এ- আলম সিদ্দিকীর পোষ্টার ও প্লেকার্ড ছিড়ে ফেলা শুরু করলে সে ও তার পরিবার বাঁধা দিতে গেলে মিছিল থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
তাদের বাঁধা স্বত্বেও তাদের বাড়ির আশেপাশে লাগানো নৌকার পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক হায়দার আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নৌকার প্রার্থী মিছিলসহ চিনামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এসে সমবেত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তার বাসা থেকে বের হয়ে তাদের বাঁধা দেয়।
একপর্যায়ে বাঁধা উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়ির আঙিনার বেড়া ভাঙচুর করে।
হামলার ছবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে বেশ কয়েকটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় নৌকার সমর্থকরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেক সমর্থক হাসমত আলী রেজা জানান, হামলার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী বাড়িতেই ছিলেন।
আমরা তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যত্র সরিয়ে নেই। আমার ধারনা তার প্রাণনাশের জন্য এ হামলা চালানো হতে পারে।
প্রার্থীদের কথা –
এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ শাফী খান জানান, হামলার ঘটনার বিষয়টি ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
নৌকার সমর্থকদের কারণে সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচরণা করতে পারছিনা। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই তারা বাঁধা প্রদান করছে।
এমনকি আমার নিজের এলাকায় চিনামুড়া এসে হুমকি দিয়ে গেছে যে আমার পক্ষে নির্বাচন করবে তার হাত-পা ভেঙ্গে ফেলা হবে।
১৬ তারিখের পর এলাকা ছাড়া করা হবে। এলেঙ্গা পৌরসভার নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ, সুষ্ঠ ,নিরপেক্ষ ও শান্তিপুর্ন করার জন্য জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
হামলার ঘটনা অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ নূর-এ-আলম সিদ্দিকী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিল থেকে নৌকার সমর্থক চেচুয়ার আওয়াল পীরকে পিটিয়ে গুরতর আহত করে।
বর্তমানে সে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তার বক্তব্য –
টাঙ্গাইল জেলা সিনিয়ার নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, বিষয়টি আমাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
জানার পরপরই কালিহাতী থানাকে অবহতি করেছি। এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামি ১৬ মার্চ এলেঙ্গা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ ও নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বর্তমানে এলেঙ্গা পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ৪’শ ৬৭ জন। ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার