নাগরপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের নাগরপুরে মৃৎশিল্প ও শিল্পী হারিয়ে যাওয়ার পথে।
শিল্পায়নের যুগে প্লাস্টিক শিল্পের উত্তরোত্তর প্রসারের সাথে সাথে হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, খেলনা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কদরও কমেছে স্থায়ীত্বের বিবেচনায়।
মৃৎশিল্পীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন; তারা বললেন “ভালো নেই আমরা”।
নিজের ও সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন।
স্থানীয় ভাষায় এদের কুমার বলা হয়। কুমাররাও এতোদিন টিকে ছিলেন নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু এঁটেল মাটি ও জালানীর মূল্য বৃদ্ধি; পৃষ্ঠপোষকতার অভাব; সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া এবং মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তারা পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
উপজেলার গয়হাটা ও সহবতপুর ইউনিয়নের কুমার পাড়া ঘুরে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে মাটির কলস, চাড়ি, হাড়ি, পাতিল, খুঁটি, মাটির ব্যাংক ও টবসহ নানান রকমের খেলনা তৈরি ও সামগ্রীগুলো রং তুলি দিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেতে ব্যস্ত।
এই কুমার পাড়ায় প্রায় একশ’টি পাল পরিবার রয়েছে। তারা তাদের মাটির তৈরী সামগ্রীগুলো বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন।
বর্তমানে মানুষ মাটির সামগ্রীর পরিবর্তে এল্যুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের সামগ্রীর ব্যবহার করার ফলে মাটির তৈরী জিনিসপত্রের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে এবং কালের বির্বতনে বিলীনের পথে।
সরেজমিন, কুমার পাড়ার ভাবন পাল (৪৩) জানান, যুগের পরিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে মাটির তৈরি সামগ্রীগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।
তবে গ্রামগঞ্জের শিশুদের মাঝে এখনো রকমারী খেলনাপাতির চাহিদা রয়েছে; যাহা বিভিন্ন পূজা-পার্বন ও গ্রাম্য মেলায় প্রচুর চাহিদা ও বিক্রি হয়।
গৌরাঙ্গ (৬০) বলেন, এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য যে সময়, শ্রম, পুজি লাগে উহার যোগান সম্ভব হচ্ছে না; বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
শ্রীবাস পাল (৪৫) ও খুশি মোহন (৪৭) বলেন, ব্যাংক বা এনজিও এ পেশায় ঋণ দেয় না।
এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানো সম্ভব না।
তাই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে অনেকেই। সম্পাদনা – অলক কুমার