বিশেষ প্রতিবেদক : সজীব চাকুরি করেন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে। সেখানে যোগদানের জন্য তার শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কিনা সেটার টেষ্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
এজন্য তিনি করোনা টেস্ট করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আউটডোর কাউন্টারে টিকেট কাটতে যান।
সেখানে তার কাছে চাওয়া হয় এক হাজার টাকা। এর থেকে এক টাকা কম হবে না মর্মে জানানো হয়।
সজিবের মত হৃদয় মন্ডল নামের আরেকজন গিয়েছিল করোনা পরীক্ষার জন্য টিকেট কাটতে।
তার কাছেও এক হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে নইলে সেখানে ভীড় করতে নিষেধ করেন টিকেট কাউন্টারের লোকজন।
টাকা নেয়ার বিষয়টি তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে পড়ে। এমন খবরে ঢাকা পোস্টের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি অভিজিৎ ঘোষ টিকেট কাউন্টারে গিয়ে সেখানকার দায়িত্বরতদের কাছে জানতে চান এবং ছবি তোলেন।
পরে কাউন্টারের লোকজন অনুমতি ছাড়া কেন ছবি তোলা হচ্ছে সেই প্রশ্ন করেন সাংবাদিককে।
এসময় টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বরত সোহাগ ও আউটডোর টিকেট কাউন্টার ইনচার্জ রুবেল হাসপাতালের আরএমও’র সাথে মোবাইলে কথা বলার পর সাংবাদিক অভিজিৎ ঘোষকে টিকেট কাউন্টারে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে খবর পেয়ে অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে টিকেট কাউন্টার থেকে উদ্ধার করেন।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আউটডোর টিকেট কাউন্টারে এমন ঘটনা ঘটে।
অভিযোগকারীদের অভিযোগ –
হাসপাতালে আসা ভূঞাপুর উপজেলার রুহুলী গ্রামের সজীব বলেন, ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরি করি। কোম্পানী থেকে বলা হয়েছে যোগদানের আগে করোনার টেস্ট সার্টিফিকেট লাগবে।
সেই অনুযায়ী টেস্ট করানোর জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে টেস্ট করানোর জন্য গিয়েছিলাম।
পরে হাসপাতালের আউটডোরে টিকেট কাটতে গেলে তারা এক হাজার টাকা দাবী করে। পরে টাকা না থাকায় আর টেস্ট করাতে পারিনি।
হৃদয় মন্ডল বলেন, করোনার টেস্ট করানোর জন্য গেলে টিকেট কাউন্টারের সোহাগ আমার কাছে এক হাজার টাকা চায়।
পরে তার সাথে দরকষাকষি করলেও তিনি এক টাকাও কম রাখা হবে না বলে জানায়।
তিনি বলেন, তোমার মত আরো তিনজন করোনার টেস্ট করার জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কেটেছে।
টিকেট কিনতে আসা রুবাইয়েদ বলেন, আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকেট কাটতে গেলে ৫ টাকার টিকেট ১০ টাকা রাখা হচ্ছে; বললে টিকেট কাউন্টার থেকে জানানো হয় খুচরা নেই ৫ টাকার।
অনেকেই জানান, টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বরতরা টিকেট কিনতে আসা রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরন করে।
অভিযোগ অস্বীকার করে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত সোহাগ বলেন, করোনার টেস্ট এর জন্য একশ টাকা লাগে টিকেটের জন্য। বাড়তি টাকা নেয়া হয় না।
অবরুদ্ধ সংবাদিকের কথা –
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অবরুদ্ধ সাংবাদিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, করোনার টেস্টের টিকেট কাটতে এক হাজার টাকা নিচ্ছে কাউন্টার থেকে এমন অভিযোগে সেখানে ছবি ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিতে যাই।
পরে ছবি তুলে ফেরার সময় তারা আমাকে সেখান থেকে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করেন; পরে টিকেট কাউন্টারের সোহাগ আরএমও’র ফোনে কথা বলে আমাকে তার রুমে যেতে বলে।
এক পর্যায়ে আমাকে আরএমও’র রুমে নিয়ে যেতে টানা হ্যাচড়া করে।
এসময় কাউন্টারের কর্মচারী সোহাগ কাউন্টার ছেড়ে যেতে নিষেধ করেন। এজন্য তিনি দরজার সামনে হাসপাতালের কয়েকজন লোক পাহাড়ায় রাখেন।
হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা –
হাসপাতালের আউটডোর টিকেট কাউন্টার ইনচার্জ রুবেল বলেন, হাসপাতালে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা নিষেধ। ওই সাংবাদিক কাউন্টারে এসে ছবি ও ভিডিও করছিল।
পরে তাকে আমাদের আরএমও’র ২০১ নম্বর রুমে যেতে বলা হয়েছিল। তাকে টানাহ্যাচড়া করা হয়নি।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি।
জানার পরই টিকেট কাউন্টারের লোকজনকে ওই সাংবাদিককে আমার রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল কিন্তু তিনি আসেননি।
টিকেটের জন্য বাড়তি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক সদর উদ্দিন মুঠো ফোনে জানান, ঘটনাটি আমার জানা নাই, জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার