নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়াদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
আর এই দূর্নীতির শীর্ষে রয়েছেন টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগে টেকনিশিয়ান জহির।
তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
জহির দীর্ঘ এক বছর যাবত টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগে টেকনিশিয়ান হিসাবে কাজ করছেন।
আর এরই মধ্যে দূর্নীতির শীর্ষে উঠে গেছেন এবং তিনি গড়ে তুলেছেন একটি অপ্রতিরোধ্য দালাল চক্র।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা এই চক্রের হাতে জিম্মি। আর এই দালাল চক্র প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারী টাকা।
এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত জহির নামের এক প্যাথলজিস্টের।
দীর্ঘদিন যাবত তিনি সদর হাসপাতালের সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছে বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দালাল চক্রের কয়েকজন জানায়, আত্মসাৎকৃত সরকারি টাকার ভাগ হাসপাতালের উর্ধ্বতনদের কাছেও যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, জেনারেল হাসপাতালে আসা অসুস্থ রোগীদের জরুরী বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ড থেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিলে তা সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ১০৬ নং রুমে রশিদ কেটে তা করতে হয়।
নির্ধারিত ‘ফি’ এর টাকা হাসপাতালের সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে দেখা যাচ্ছে তার ভিন্নচিত্র।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাসপাতালে ভর্তি বা জরুরী বিভাগ থেকে দেয়া পরীক্ষা করতে দিলে তারা সরাসরি প্যাথলজিতে চলে যায়।
সেখান থাকা দালাল চক্র রশিদ না কেটে সরাসরি প্যাথলজিস্ট জহিরের কাছে নিয়ে আসে তারাতারি পরীক্ষা করানোর কথা বলে।
সেই সুযোগে জহির রোগীদের কাছে টাকা জমার রশিদ না চেয়ে নগদ টাকা নিয়ে রোগীদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করে দিচ্ছেন।
এভাবেই জহির ও তার দালালচক্র রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি টাকা।
ফলে বিড়ম্বনা আর ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রশিদ কেটে পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের।
ভূক্তভোগীদের বক্তব্য :
কালিহাতি উপজেলার কোকডহরা ইউনিয়নের জয়নাবাড়ী গ্রামের রেজাউর করিম (৬০)। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করলে সদর হাসপাতালে এসে কোভিট টেস্ট করান।
তিনি বলেন, টেস্টের জন্য আমি জহিরের হাতে নগদ টাকা দিয়েছি। তিনি আমাকে কোন রশিদ দেননি।
মগড়া ইউনিয়নের বেতবাড়ী গ্রামের কেতাব আলী (৫২) সাময়িক ঠান্ডাজ্বর নিয়ে কোভিট টেস্ট করাতে হাসপাতালে গেলে তার কাছ থেকেও নগদ টাকা নেয় জহির। তাকেও কোন রশিদ দেননি তিনি।
ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামের শশী আক্তার (৩২) অসুস্থতা নিয়ে সদর জেনারেল হাসপাতালের কভিট ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে জহির তার কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে স্যাম্পল টেস্ট করিয়ে দেন। তাকেও হাসপাতালের জমা রশিদ দেয়া হয়নি।
বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের তিরঞ্জ গ্রামের মিনহাজ বেপারী (৫৬) বলেন, আমি অসুস্থতা নিয়ে সদর হাসপাতালে কোভিট পরীক্ষা করতে গিয়ে জহিরকে নগদ টাকা দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাকে কোন রশিদ দেননি।
এছাড়াও হাসপাতালে আসা রোগী কল্পনা আক্তার (৩৬), বিলকিস বেগম (৩৫), শাহিনা আক্তার (৪০), কমল মিয়া (৪০), রুমি (২৫), ফাহিমা (২৫), নার্গিস আক্তার (৪৫), রাবেয়া খানম (২৯)।
এছাড়াও ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী (৪৫)’র সাথেও ঘটেছে একই ধরনের ঘটনা।
শুধুু তাই নয়, জহিরের কার্যদিবসে বেশিরভাগ ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে দালালের মাধ্যমে টেস্টের কাগজ ও টাকা সংগ্রহ করে রিপোর্ট পৌঁছে দেন রোগীদের হাতে হাতে।
এভাবেই সরকারি টাকা অবধৈভাবে লুটে নিচ্ছেন সদর জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের জহির ও তার দালাল চক্র।
এছাড়াও অভিযুক্ত জহির হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের টেস্টের কাগজ বাইরের ক্লিনিক থেকে করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন অবৈধ টাকা।
এ বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান জহির সব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলেন।
পরবর্তীতে সদর হাসপাতালে জহির এর কার্যদিবসের কয়েকটি টেস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন টাকা জমা দেয়ার রশিদ দেখাতে পারেনি।
এসব বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে জহির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সদর উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠো ফোনে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।
অভিযোগ যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।