“বিশ্বকে বদলে দিতে, বিকশিত হই আনন্দের সাথে”—এই সুন্দর প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলে শুরু হয়েছে শিশুদের আনন্দমুখর শিক্ষা নিশ্চিতের এক অনন্য উদ্যোগ। জেলার ১২টি উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের স্কুলমুখী করতে এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধে ১৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্লে গ্রাউন্ড স্থাপন করা হবে।
আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ) সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার খাগজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, “খেলাধুলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ, দলগত চেতনা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিদ্যালয়ে খেলার পরিবেশ থাকলে শিশুরা নিয়মিত স্কুলে আসতে আগ্রহী হবে, ফলে ঝরে পড়ার হার অনেকটাই কমে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুদের বয়স উপযোগী দোলনা, স্লাইড, দড়ি লাফ, ব্যালান্স বোর্ডসহ বিভিন্ন প্লে-সামগ্রী বসানো হবে। এতে শিশুরা আনন্দের মধ্য দিয়ে শেখার সুযোগ পাবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজন মহন্ত, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রনি, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, টাঙ্গাইল টেলিভিশন রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মামুনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্লে গ্রাউন্ড স্থাপনের ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার আগ্রহ বেড়ে যাবে। আগে অনেক শিশুই পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলত, কিন্তু খেলার সুযোগ থাকলে তারা আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে সময় কাটাতে পারবে।
অভিভাবকরাও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমাদের সন্তানরা এখন শুধু বই নয়, খেলাধুলার মাধ্যমে মন খুলে শেখার সুযোগ পাচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
ছাত্র ছাত্রীরা বলেন, আগে আমরা মাঠে খেলতাম এখন অনেক নতুন খেলাধুলা করতে পারবো।
শিশুদের হাসিখুশি মুখ, খেলার শব্দ আর শেখার আনন্দে টাঙ্গাইলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পাবে এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট সকলের।
জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে শিশুরা। আর তাই পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, সত্য এবং শুদ্ধ তার মধ্যে দিয়ে শিশুদের বড় করে তোলা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদের সর্ব্বোচ বিকাশ ঘটে তখনই যখন তারা আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।
মূলত শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সর্ব্বোচ বিকাশ নিশ্চিত করতে এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ করতেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই প্লেগ্রাউন্ড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে তারা যেন সবসময় নিজের দেশকে হৃদয়ে লালন করে এবং দেশকে ভালোবাসতে শেখে সেজন্য প্লেগ্রাউন্ডের পাশাপাশি তাদের জন্য বাংলাদেশের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আমাদের দেশের বেশীর ভাগ শিশু সুষ্ঠু বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। আমার চাওয়া আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরাও যেন আমাদের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আনন্দে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। আমার বিশ্বাস আমরা যদি শিশুদের প্রতি একটু যত্নশীল হই, তারা বিকশিত হবে আদর্শ, কর্মক্ষম, সুযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে। সেই সুনাগরিক যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল, পরিবেশ সচেতন এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ।