রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের তিনটি ছাত্রাবাস ১৭ বছর ধরে বন্ধ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় হল ভবনগুলো এখন আগাছায় ঢেকে গেছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে, পরিবেশ ভূতুড়ে ও স্যাঁতসেঁতে। ময়লার স্তূপে পরিণত হওয়া এই ভবনগুলো একসময় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল।
২০০৮ সালে ‘শিবির থাকত’—এমন অভিযোগে তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. দীপ কেন্দ্র নাথ দাস হলগুলো বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে কে বি ও আবু সাঈদ হলে আর শিক্ষার্থী ফেরেনি। কেবল জিএল হল ২০১৭ সালে আংশিকভাবে চালু হয়। বর্তমানে কলেজে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র সাড়ে ৯০০ জনের জন্য। এতে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সংকটে।
গত চার দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ৩৭ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল, যার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল হলগুলো পুনরায় চালু, পরিবহন সংকট নিরসন, ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ বৃদ্ধি।
বুধবার রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল এবং সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ৫ লাখ টাকা ও ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার উন্নয়ন বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন বাসের প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশাল শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় হল সংকট এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানান তারা। নিরাপত্তার অভাব, অতিরিক্ত ব্যয় ও মনোযোগহীনতায় পড়াশোনায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
অধ্যক্ষ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “হল সংস্কারের প্রস্তাব শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং নতুন দুটি হল নির্মাণের কাজও চলমান।”
পুলিশ কমিশনার জানান, “ছাত্রদের দাবিগুলো যৌক্তিক। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়াতে দ্রুত পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
প্রায় শতবর্ষ পুরনো এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা দূর করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কলেজ সংশ্লিষ্টরা।