এবারও অনিশ্চয়তার পথে দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ৩৬ বছর যাবৎ এ উপজেলায় আওয়ামী যুবলীগের কার্যক্রম আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসলেও এ বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণের লক্ষে চূড়ান্ত হয় সম্মেলনের দিনক্ষণ। এরপরও দফায় দফায় তারিখ নির্ধারণ আর পরিবর্তনে এখন অনিশ্চিত এ উপজেলার সম্মেলন। এ নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি আর চরম উৎকণ্ঠায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনকারী এ সম্মেলন স্থগিত করার পায়তারা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন দলের ত্যাগী ও মাদক বিরোধী নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালে দেলদুয়ার উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর এ উপজেলায় চার দফায় যুবলীগেরর আহ্বায়ক কমিটি হলেও চূড়ান্ত হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ২০১৩ সালে সর্বশেষ গঠিত এ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি নানা জটিলতায় গত ছয় বছরেও গঠণ করতে পারেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যদিও চলতি বছরের ৫ জুলাই বিশেষ বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি এ উপজেলা কমিটি গঠণে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন ২০ জুলাই। এ সভায় জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউর রহমান চঞ্চল, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ লায়ন এম. শিবলী সাদিকসহ উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা।
তবে ৯ সেপ্টেম্বর অনিবার্য কারণে সেই তারিখ পরিবর্তন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর নির্দেশে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সম্পাদকের সমন্বয়ে চলতি মাসের ১৪ তারিখ চূড়ান্ত হয় ওই সম্মেলনের দিন। সম্মেলকে কেন্দ্র করে যুবলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পদ প্রত্যাশিদের পোস্টার ফেস্টুনে ছেয়ে যায় গোটা উপজেলা। সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি আর সম্পাদক এ নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাট-বাজার আর পাড়া-মহল্লায় বইতে শুরু করে আলোচনা আর হিসেব নিকেশ। তবে গত ১২ অক্টোবর সম্মেলনের ঠিক দু’দিন আগেই কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ সম্মেলন আর নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। এমন সিদ্ধান্তে হতাশা হয়ে পড়েন উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। কেন হলো এ সম্মেলন স্থগিত, তা জানতে জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এখন উপজেলার নেতাকর্মীরা।
দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম মজনু জানান, আমরা যারা আওয়ামী পরিবারের লোক, আমরা অবশ্যই নৌকার পক্ষে, আর নৌকার পক্ষে মানেই আমরা সবাই আহসানুল ইসলাম টিটুর লোক। এক্ষেত্রে এমপি সাহেবের এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়।
সাধারণ কাউন্সিলর কিংবা ভোটারের চাওয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা একজন সৎ ও যোগ্য লোককে বের করে আনতে চাই, যার কোন মাদকের সাথে সম্পৃক্ততা নেই। যিনি সঠিক ভাবে দেলদুয়ার উপজেলা যুবলীগকে সংগঠিত করে আগামী দিনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা হতাশা প্রকাশ করে জানান, এ রকম একজন চিহ্নিত লোককে কেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এত গুরুত্ব দেন তা বুঝতে তাদের কষ্ট হয়।
অভিযোগের বিষয়টি প্রবাকান্ডা দাবি করে জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক এহ্সানুল হক সুমন বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সিদ্ধান্তেই এই সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এমপির কোন হস্তক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক সাথে মুঠো ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তবে দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন আর নির্বাচন স্থগিতে হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত হতে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) এর সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি জানান, দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন আর নির্বাচন গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আগামী ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিলের কারণে হঠাৎ করেই ওই সম্মেলন আর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পরে দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।