মায়ের দায়ের করা ভুয়া মামলা, মেয়ের দেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য ও চাচার দাবিকৃত সাত লাখ টাকা না দেয়ায় ২৮ দিন কারাভোগের পর ২৩ অক্টোবর (বুধবার) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জামিনে মুক্তি পেলেন নয়ন নামের এক নির্দোষ যুবক। কারামুক্তির পর এমনটাই অভিযোগ করেছেন বাবুল হোসেন নয়ন।
জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের বাসাইলের চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সখিপুরের এক স্কুল ছাত্রী। এর চারদিন পর টাঙ্গাইলের ডিসি লেক এলাকা থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার পরিবার। এসময় ওই ছাত্রী তার পরিবারকে জানান, নয়ন নামের একজন তাকে অপহরণ করে কক্সবাজারের একটি হোটেলে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। একই দিন নয়ন নামের একজনকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির পরিবার। তথ্য – সাপ্তাহিক জাহাজমারা
পরে নামের সূত্র ধরে একই গ্রামের শাজাহান মিয়ার ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আটক করে পুলিশ। এসময় ওই ছাত্রীও পুলিশের সামনে জোড়ালো ভাবে শনাক্ত করে বাবুল হোসেন নয়নকে। এরপর তার নামে মেয়েটির মা বাদী হয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। পরে নয়নকে আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে নয়ন নিজেকে আদালতে নির্দোষ দাবি করে। পরে আদালত রিমান্ড বাতিল করে জেলগেটে নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন। সেখানেও নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে মেয়েটির কাছে থাকা একটি ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে কক্সবাজারের ওই হোটেলে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হন কারাগারে থাকা নয়ন এই ঘটনায় জড়িত নয়। তখন তদন্তে বেরিয়ে আসে মূল আসামি বাসাইল উপজেলার নূহু মিয়ার ছেলের নয়ন। পরে অভিযুক্ত নয়নকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় মূল আসামি নয়ন।
নয়নের বাবা শাহজাহান মিয়া জানান, অপরাধী না হয়েও বিনাদোষে ২৭ দিন কারাভোগ করেছে নয়ন। অংশ নিতে পারেননি বিএ ফাইনাল পরীক্ষায়। সকলের সহযোগিতায় নির্দোষ প্রমানিত হয়ে অল্পসময়ের মধ্যে জামিন পাওয়ায় খুশি তিনি। তবে যাদের কারণে তার ছেলে অপরাধী না হয়েও কারাভোগ ও ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
নয়নের আইনজীবী মো. সেলিম আলদীন বলেন, আটককৃত ব্যক্তি নিজেকে বার বার নির্দোষ বলে আসলেও শুধু মেয়ের মুখের কথায় পুলিশ তদন্ত না করে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করে এবং বিনা অপরাধে ২৭ দিন কারাভোগ করায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নয়ন জানান, আমি ওই মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজার যাইনি এবং এই মেয়েকে আমি চিনিনা পুলিশকে বারবার বললেও তারা আমার কথায় গুরুত্ব দেয়নি। আমি থানা হাজতে থাকা অবস্থায় মেয়ের চাচা মোতালেব আমার কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিলে মামলা তুলে নিবে। না হলে আমাকে জেলে পাঠিয়েই ছাড়বে বলেন তিনি। এসময় আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ২৭ দিন বিনাদোষে কারাভোগ করতে হলো। দায়ীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দ্রুত মুক্তি পাওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি।