অলক কুমার : টাঙ্গাইলের বিএনপি অভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করছে।
কোন্দলের কারণে অভ্যন্তরীন রাজনীতি এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
ফলে দলীয় কোন্দল জেলা সদর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত।
দলের মধ্যে রেষারেষি আর বিভক্তি এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করছে নেতাকর্মীরা।
কোন্দলের কারণে প্রায় কর্মসুচিতে সচরাচর অংশ নিতে দেখা যায়না অনেক নেতাকেই।
বিএনপির কোন্দলের আচঁর লেগেছে যুবদল ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও।
বিভক্তির শিকার এসব সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচি থেকে বিরত থাকছেন।
যা তৃনমুল ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
তাদের অভিযোগ নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে টাঙ্গাইলে বিএনপি ক্রমেই দূর্বল হয়ে পড়ছে।
দলীয় কোন্দল ও বিভক্তি নিরসন করতে না পারলে আগামী দিনে আন্দোলন কর্মসূচি পালন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম খেসারত দিতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমুল নেতাকর্মীরা।
যেখান থেকে শুরু কোন্দলের :
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কোন্দল দীর্ঘদিনের পুরোনো।
বিগত ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বুলবুল নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত হওয়ার পরে এক পর্যায়ে এ দু’নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে তাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বহিস্কারের ঘটনাও ঘটে।
পরে ২০০৯ সালের ২১ জুন এডভোকেট আহমেদ আযমকে আহবায়ক কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফাকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।
তখন জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দুরত্ব বাড়তে থাকে। ২০১১ সালের ৯ জুন পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
মুলত দু’পক্ষেই নিজেদের পছন্দের লোক কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে গিয়ে কমিটি গঠন করতে দুবছর সময় লাগে। মূলত তখন থেকেই বিএনপির অন্তর্দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়।
আহমেদ আযম খানের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে তখন থেকেই বিএনপির একটি অংশ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে।
তখন বিএনপিতে বিভক্তির কারণে জেলা ছাত্রদল, যুবদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। মূল দলে বিভক্তির কারণে এসব অঙ্গ সংগঠনেও বিভক্তি দেখা দেয়।
নেতাকর্মীদের বক্তব্য :
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে আহবায়ক ও মাহমুদুল হক সানুকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
সব উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়।
কিন্ত কয়েক মাসের মধ্যে ওই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে পুনরায় আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটিতে আহমেদ আযম খান আহবায়ক হলেও বাদ পড়েন সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু, যুগ্ম-আহবায়ক অমল ব্যানার্জি, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদুসহ অনেক নেতা।
এঘটনায় জেলা বিএনপির বিশাল একটি অংশ ক্ষুব্দ হন।
তাদের অভিযোগ আহমেদ আযম খান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার পক্ষের লোকজন দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছেন।
পদবঞ্চিত এই অংশটি আহমেদ আযমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন।
তারা সংবাদ সম্মেলন করে ছাইদুল হক ছাদু ও মাহমুদুল হক সানুর নেতৃত্বে বিএনপির সকল কার্ষক্রম চলবে বলে ঘোষনা দেন।
তার অংশ হিসেবে তারা পৌরশহর ও সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করেন।
গত ২৩ আগষ্ট আশরাফ পাহেলীকে সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর শহর বিএনপি ও শফিকুর রহমান খান শফিককে সভাপতি ও আজহারুল ইসলাম লাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করে।
দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য :
বিদ্রোহী কমিটির নেতা শফিকুর রহমান খান শফিক জানান, আমরা ইতিমধ্যে ১২টি ইউনিয়ন কমিটি করেছি। অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে।
দুই একটি কমিটি বাকি রয়েছে। এগুলো শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সদর উপজেলা ও পৌরশহর সম্মেলন করব।
যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটি শেষ করে গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা ও পৌর কমিটি সম্মেলন করা হয়েছে।
ওই সম্মেলনে আজগর আলীকে সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে সদর উপজেলা ও পৌর কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীমকে সভাপতি ও ইজাজুল হক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর শহর কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যুগ্ম-আহবায়ক হাসানুজ্জামিল শাহিন বলেন, বিদ্রোহীদের কমিটি গঠনের সাংগঠনিক কোন ভিত্তি নেই।
তারা যা করছে তা নিয়ম বহির্ভূত ও অগঠনতান্ত্রিক কাজ । দলের ভেতর তারা বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে।
কেন্দ্রে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে খুব শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু বলেন, ব্যর্থতার কারণে যদি কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয় তাহলে আহমেদ আযমও আহবায়ক থাকার কথা নয়।
অর্থাৎ তিনি প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁতকারী সুবিধাভোগী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাথে ব্যবসা বানিজ্য করছেন এমন লোক আহবায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
যা জেলার অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা মেনে নিতে পারছেন না।
জেলা বিএনপির আহবায়ক আহমেদ আযম খান বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে মত পার্থক্য থাকবে।
আহবায়ক কমিটির সব যুগ্ম-আহবায়কসহ সকল নেতৃবৃন্দ আমাদের পক্ষে রয়েছে। পদ বঞ্চিত হয়ে দুই একজন বিদ্রোহ করতেই পারে।
তবে আমি তাদের গুরুত্ব দিচ্ছি না। তারা ভুল বুঝছে, সংশোধন হলে এমনিতেই তারা ফিরে আসবে।
গত বৃহস্পতিবার শহর ও সদর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কথা :
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশানার বাইরে গিয়ে দলে যে কেউ অসাংগঠনিক বা নিয়ম বহির্ভূত কাজ করলে দল তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে।