বিশেষ প্রতিবেদক : ৪ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের কমিটির এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
কিন্তু তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ এক বছরেও তা করতে পারেনি।
কারণ হিসেবে সিনিয়র নেতা ও এমপির বাসায় বিভিন্ন তদবির, ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আর সেই দুইজন থেকে তিনজন হতে পারেনি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ।
এরই মধ্যে এই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
এতে ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকের আবার ছাত্রত্বও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায় –
দীর্ঘ প্রায় একযুগ পর গত ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়।
পরে সার্কিট হাউজে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসানকে দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন।
কমিটি গঠনের পরপরই এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়।
সে সময়ই পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, টাঙ্গাইল শহর বা সদর বাদ দিয়ে গোপালপুর-ভূঞাপুর আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির সমর্থনপুষ্ট ও গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক সোহানুর রহমান সোহানকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বাসাইল-সখীপুর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের আর্শীবাদপুষ্ট সখীপুর উপজেলায় বাড়ি ইলিয়াস হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ :
সে সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভের সাথে বলেন, ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক কোন কর্মসূচিই পালন করতে পারবে না।
তাদের সেই কথা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
সভাপতি সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি।
পাশাপাশি ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটগুলোর কার্যক্রম বা সম্মেলনও করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিহত করার মতো সেই সাংগঠনিক শক্তিও তাদের মধ্যে নেই।
দুইজনের এই কমিটি নিয়েই তারা এক বছর পার করে দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রের তথ্য :
দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আগের কমিটির বেশির ভাগ নেতার ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।
প্রায় একযুগ পর ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়।
এতে সোহানুর রহমান সোহানকে সভাপতি ও ইলিয়াস হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি তাঁরা।
সাধারণ নেতা-কর্মীদের ভাষ্য :
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা জানায়, তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া রোড, কালিবাড়ী রোডসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও তারা সফলভাবে করতে পারেনি।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সখীপুর উপজেলা ছাত্রলীগ, পৌর ছাত্রলীগ ও মুজিব কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, দেলদুয়ারে চিহ্নিত রাজাকারের ছেলে মাসুদ রানাকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে বিতর্ক এবং বির্তকিত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ তৈরি হয়।
এমন অভিযোগের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই ইউনিট কমিটিগুলো স্থগিত করে দেয়।
এতে করে জেলা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের শহরে অবস্থিত নিজস্ব অফিসে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কখনও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায় না।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের শুধু তাদের নিজস্ব নেতা ও এমপির বাসায় বিভিন্ন তদবির, ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের কোন কর্মকান্ডে সাধারণ নেতাকর্মীদের উপস্থিত দেখা যায় না বলেও দলীয় সূত্র জানায়।
পদ প্রত্যাশীদের বক্তব্য :
জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘ সম্মেলন না হওয়ায় পদ প্রত্যাশীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।
সম্মেলন হওয়ার পর তারা আশা করেছিলেন হয়তো পদপদবি পাবেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় তাদের সে আশা পূর্ণ হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানান, তারা অনেকে ৮-১০ বছর ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন; কিন্তু আজও কোনো পদ পাননি। তাদের অনেকেরই ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পথে। এতে অনেকেই হতাশ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁদের নিজ নিজ পছন্দের লোকদের কমিটিতে নিতে চান। সব নেতার সঙ্গে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হচ্ছে। তাই কমিটি করতে সময় লাগছে।
সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কথা :
এবিষয়ে জানতে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান এর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কল রসিভ করেন নি।
বিষয়টি নিয়ে সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, কেন্দ্র থেকে আমাদের এক বছরের জন্য জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়।
এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যার কারণে সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে আমরা ত্যাগী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতাকর্মীদের যাচাই করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা ১৭১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সম্পাদনা – অলক কুমার