নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন বৃহস্পতিবার।
অন্যান্য আসামিদেরও হাজির করা হয়েছিল।
কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সুবিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আবেদন দেন।
আরো পড়ুন – মির্জাপুরের আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান কাদের সাময়িক বরখাস্ত
তাই তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
কখনো আসামি অসুস্থ থাকায় কারাগার থেকে আসামি আদালতে আনা হয়নি অথবা তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজির না হওয়ার কারণে অন্তত নয়বার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়েছে।
ফারুক আহমেদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মামলার শেষ পর্যায়ে এসে আসামিরা বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব করতে নানান অজুহাতে সময় ক্ষেপন করছেন।
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস আকবর খান জানান, টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এই হত্যা মামলাটির বিচার কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন।
মামলার কারাগারে আসামি সাবেক পৌর মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তিকে আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনে থাকা আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানাসহ সবাই হাজির হন।
আরো পড়ুন – কি কারণে নতুন মন্ত্রীসভা থেকে ঝড়ে পড়েছে টাঙ্গাইলের নক্ষত্রটি?
সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ফারুক আহমেদ হত্যার দিন যে সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, সেই সাধারণ ডায়েরির কপি তলবের আবেদন করেন।
এ বিষয়ে শুনানির পর আদালতের বিচারক আফরোজা বেগম তাদের আবেদন নাকচ করে দেন।
তখন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে একটি আবেদন দেন।
এছাড়াও সাধারণ ডায়েরির কপি তলবের আবেদন নাকচ করে দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে তারা (আসামি পক্ষ) উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।
পরে আদালত আগামি ১ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য্য করেন।
ফারুক আহমেদের পরিবারের বক্তব্য –
তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষি গ্রহণের তারিখ বার বার পেছানোর প্রসঙ্গে নিহত ফারুক আহমেদের মেয়ে ফারজানা আহমেদ বলেন, মামলার সব সাক্ষি হয়ে গেছে।
এখন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষি হলেই বিচারের কাজ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
তাই আসামি পক্ষ নানা ওজুহাতে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনাক্রম –
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করা হয়।
আরো পড়ুন – অজ্ঞাত কারণে সামনে আসেনি কালিহাতী উপজেলা আ’লীগের অনুমোদিত কমিটি
২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিছুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পা’র জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান’রা চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামী করা হয়।
২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরমধ্য দিয়েই বিচার কাজ শুরু হয়।