৯ নভেম্বর। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ বিহারী দাস ৩৮তম হত্যা বার্ষিকী। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এই নির্মম হত্যার বিচার করেনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শহীদ কল্যাণের পরিবারকে কথা দিয়েছিলেন তার দল ক্ষমতায় গেলে এই হত্যার বিচার করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়া হবে।
কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৪ বার ক্ষমতায় গেলেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বিপন্ন পরিবারটিকে সরকারী সাহায্য করা দূরের কথা অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কোন খোঁজখবরও নেন না। বরং বিএনপির একটি দালাল চক্র আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের সাথে মিশে পরিবারটিকে নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পায়তারায় লিপ্ত।
জানা যায়, বিগত ১৯৮১ সালের ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের পক্ষে টাঙ্গাইলের যুগনী হাটে একটি নির্বাচনী মিছিলে নেতৃত্বে দেয়ার সময় বিএনপি নামধারী দুর্বৃত্ত লাল মাহমুদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তৎকালীন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ বিহারী দাসকে প্রকাশ্য দিবালোকে বুকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার নির্মম মৃত্যু হয়।
প্রধান আসামি লাল মাহমুদ তৎকালীন বিএনপি সরকারের ধর্মমন্ত্রী আব্দুর রহমানের ভাতিজা ও জামাতা। ঘটনার দিনই লাল মাহমুদসহ অন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সে সময় ঘটনার সাক্ষীরা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।
কিন্তু তৎকালীন বিএনপি সরকারের চাপে পুলিশ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেননি। এরপর ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী খোরশেদ আলম বাদী হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রধান আসামি লাল মাহমুদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে নালিশী মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত ঘটনার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
আসামিপক্ষ এই মামলা বাতিলের জন্য টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করলে তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ বদরুজজামান সরকারী আবেদন নাকচ করে দেন। আসামিপক্ষ এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্টে তৎকালীন বিচারপতি মোস্তফা কামাল ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানির পর আসামিদের রিভিশন খারিজ করে দেন।
এরপর মামলাটি বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রভাবশালী আসামির এরশাদের সামরিক সরকারের আমলে উচ্চ পর্যায়ে তদ্বির করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই হত্যা মামলার বিচার কাজ বন্ধ করা হয়। এই ঘটনার ফলে আজ পর্যন্ত এই হত্যার বিচার হয়নি।
বিগত ১৯৮১ সালে কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর নবেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল শহরের আদালত রোডে কল্যাণ বিহারীর বৃদ্ধ মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের শোক ও সমবেদনা জানাতে আসেন। তিনি শহীদ কল্যাণের বাবা-মাকে সান্তনা দেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে এই হত্যার বিচার হবে এবং অসহায় পরিবারকে সহায়তা দেয়া হবে বলে কথা দেন।
শহীদ কল্যাণের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৪ বার ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু সরকার কল্যাণ বিহারী দাস হত্যার বিচারের কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া বিপন্ন এই পরিবারটিকে সরকারীভাবে কোন সাহায্য ও সহযোগিতাও দেয়া হয়নি।
শহীদ কল্যাণের বড় বোন টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শেফালী দাস এবং বড় ভাই প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক বিমান বিহারী দাস কল্যাণ হত্যার বিচারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।