বাবা-মায়েরা প্রায়ই অনুযোগ করেন যে, তাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে চায় না। পড়তেও তাদের ভালো লাগে না। শিক্ষা গবেষকদের অভিমত, স্কুলের পরিবেশ পছন্দ না হলে শিশুরা সাধারণত স্কুলে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি মাথায় রেখে শিশুবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন ঘাটাইলের শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান “উইজডম ভ্যালি” কর্তৃপক্ষ। সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, স্থায়ী মঞ্চ, নানা ফুল-ফলের গাছসহ স্কুলের দেয়ালকে সাজানো হয়েছে শিশুদের উপযোগী করে। এ কারণে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা এখন আর স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনা।
‘আমরা গড়বো সুন্দর আগামী’ শ্লোগান নিয়ে ২০০০ সালে ঘাটাইল উপজেলা সদরে উইজডম ভ্যালি’র যাত্রা শুরু হয়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয় স্কুলটিতে। এটি এখন উত্তর টাঙ্গাইলের সেরা শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দুই বিঘা জমির উপর সুপরিকল্পিতভাবে স্কুলভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীর কারণে ভবনটি সকলের নজর কেড়েছে। মনোরম এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে শিশুবান্ধব সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা।
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য নিয়মিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। আগামী বছর উইজডম ভ্যালির বিশ্বস্ততার ২০ বছর পূর্তি হবে। এ উপলক্ষে বার্ষিক ম্যাগাজিন “উপত্যকা” বের করেছেন। যা পাঠক নন্দিতও হয়েছে। এছাড়া আবৃত্তি, উপস্থাপনা, সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন প্রশিক্ষণ বিভাগ রয়েছে। নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। জাতীয় দিবসগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের পাশাপাশি বই মেলা, পিঠা উৎসব, নবান্ন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।
ইংরেজিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ইংরেজি শেখার একটি নতুন ধারণা ‘থার্ড পেপার’ যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইংরেজি রিডিং টেস্ট ও ওয়ার্ডমাস্টার প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের গণিত ভীতি দূর করতে নিয়মিত গণিত অলিম্পিয়ার্ড এর আয়োজন করা হয়। শিশুদের লেখা সুন্দর করার জন্য রয়েছে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা। উইজডম ভ্যালির সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতের লেখা প্রায় একই রকম ও দৃষ্টিনন্দন। যা সকলের দৃষ্টিকাড়ে। এর অনুকরণ করছে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলটিতে রয়েছে সুশৃঙ্খল একটি কাবদল। রয়েছে শিশুদের অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানতে স্কুলের স্থায়ী মঞ্চটি টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ফলকের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকৃতি ও পাঠ্যক্রম ভিত্তিক প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষগুলোর নামকরণ করা হয়েছে দোলনচাঁপা, মাধবীলতা, জারুল, গিরিমল্লিকা, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি ফুলের নামে। শ্রেণিকক্ষের নাম অনুসারে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে ক্যাম্পাসকে সবুজ-শ্যামল করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছে মহুয়া, নাগেশ্বর, অশোক, স্বর্ণচাঁপা, কাঁঠালিচাঁপা, নাগলিঙ্গম ও তমাল এর মতো দুষ্প্রাপ্য গাছ। শিক্ষার্থীদেরকে এসব গাছের সাথে পরিচিত করার জন্য গাইড টিচারের মাধ্যমে পরিচিতিমূলক ক্লাস নেয়া হয়ে থাকে।
উইজডম ভ্যালি ক্যাম্পাসে বর্তমানে ৭’শ ৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ৩২ জন শিক্ষক আছেন। নার্সারী থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭টি শ্রেণিতে ২১টি শাখা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৬ জন।
প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থী আসছেন স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম দেখতে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি, সহপাঠ কার্যক্রম ও ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে নিজ বিদ্যালয়ে তা অনুকরণ-অনুসরণ করছেন। বিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডে অভিভাবকরাও ভীষণ খুশি। তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের সন্তানরা স্কুলে আসার ব্যাপারে কোনো অনাগ্রহ দেখায় না বরং তারা উৎফুল্ল এবং গর্বিত উইজডম ভ্যালির শিক্ষার্থী হতে পেরে।
ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘শিশুদের স্কুলগামী করতে এবং লেখাপড়া ভীতি দূর করতে কাজ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় শিশুবান্ধব স্কুল ক্যাম্পাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে স্কুলটিকে একটি আধুনিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি’।