পাপিয়া, বয়স ২ মাস ১৫ দিন। তার মা আছে, কিন্তু বাবা থেকেও নেই। যার ঔরষে পাপিয়ার জন্ম হয়েছে, সেই কাপুরুষ নিজেকে পাপিয়ার বাবা পরিচয় দেয়ার সৎ সাহস নেই। নেই সেই ফুটফুটে মেয়েটিকে নিজের মেয়ে বলে কোলে তুলে নেয়ার সৎ সাহস। সেই কাপুরুষের মনুষ্যত্বহীন লালসায় সমাজ আজ ক্ষত-বিক্ষত, বিকলাঙ্গ।
পাপিয়া বেড়ে উঠছে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। পরিবারের সবার আদর সোহাগে যে বয়সে বড় হওয়ার কথা, সেখানে পালিত হচ্ছে কাজের খালার হাতে। কত না অসহায় নিষ্পাপ শিশুটি।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর রাস্তা থেকে পাওয়া সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মধ্য বয়সী মহিলা মা হয়েছেন। গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বর্তমানে গাজীপুরের কামিশপুরের সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে মা ও মেয়ে দুজনই শারীরিকভাবে সুস্থ্য আছেন।
সরেজমিনে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায় কন্যা শিশুটির নাম রাখা হয়েছে পাপিয়া। মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় শিশুটির দেখভালের জন্য শান্তা নামের একজনকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তপক্ষ। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি পূনর্বাসন আইনে পরিচালিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে ১৪৪ জন আশ্রিত রয়েছেন। এরমধ্যে একমাত্র হৃদয় বিদারক ঘটনা মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলা গর্ভবর্তী হয়ে এসে মা হয়েছেন।
আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত দেবনাথ স্যারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা এই মহিলাকে ভর্তি করি। পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিকবার চেকআপ ও গর্ভবতীর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। প্রসব ব্যাথা শুরু হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
জাকির হোসেন আরো বলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মা খেয়াল খুশিতো শিশুটিকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ায়। মায়ের আদর ভালবাসা ও দায়িত্ব কর্তব্য ছাড়াই বেড়ে উঠছে এতিম পাপিয়া। তবে সর্বাত্মক যত্ন করি। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের এখানে শিশু লালন পালনের কোন ব্যবস্থা নেই। মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাটি এখনো তার ঠিকানা পরিচয় কিছুই বলতে পারেন না। শুধু নাম পারভীন বলেই হেসে উঠেন।
কালিহাতীর প্রাক্তন বর্তমানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, বিভিন্ন গনমাধ্যমে এই গর্ভবতী মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার খবর পাই। পরে তাকে ২০১৯ সালের ১৮ আগষ্ট উদ্ধার করে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে কাশিপুরের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা গর্ভবতী হয়ে মা হয়েছেন, এর থেকে জঘন্য কি হতে পারে? বড় হয়ে পাপিয়া যখন জানতে পারবে তার জন্মসূত্র। তখন সমাজের প্রতি তার অনেক ঘৃণা জন্ম নিবে।