ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।
পতনের পর থেকে টাঙ্গাইলের সকল সাবেক সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।
একাধিক সাবেক সংসদ সদস্যসহ প্রায় ডজন খানেক নেতা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এদের সবার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা।
গ্রেপ্তার এড়িয়ে এসব নেতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, দেশ ছেড়ে যাওয়া বা আত্মগোপনে চলে যাওয়া নেতাদের কয়েকজনের বাড়িঘরে গত ৪ ও ৫ আগস্ট হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের খবর পাওয়ার পরেই তারা আত্মগোপন করেন।
৫ আগস্ট টাঙ্গাইল শহর থেকে পালানোর সময় দেলদুয়ার উপজেলায় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পড়েন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মামুন অর রশিদ। গণপিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হন।
মামলা –
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গিয়ে টাঙ্গাইল শহরে গুলিতে নিহত হন শিক্ষার্থী মারুফ মিয়া।
পরে তার মা মোর্শেদা বাদি হয়ে ১৯ আগস্ট এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এতে জেলার সকল সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে মির্জাপুরে আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট গুলিতে আহত হন কলেজ ছাত্র ইমন। চিকিৎসার্ধীন অবস্থায় ১৯ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।
পরে ইমনের ভাই সুমন বাদি হয়ে ১৫৭ জনকে আসামি করে ২১ আগস্ট মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায়ও জেলার সকল সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
উক্ত দুই হত্যা মামলা ছাড়াও টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, মধুপুর ও সখীপুর থানায় আরও কয়েকটি মামলা হয়।
এতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
এসব মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর তানভীর হাসান ফেরদৌস ওরফে নোমান, গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোমেনসহ অন্তত ২৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
যারা ভারতে পালিয়েছেন –
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির ও তার ভাই টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি গত আগস্টের শেষ দিকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে গেছেন।
একই সময় জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আমিনুর রহমানও ভারত পাড়ি জমিয়েছেন।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারতে পৌঁছেছেন টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয়।
এর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতে যান টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন।
একই সময় ভারতে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আনন্দ মোহন দে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা আসিফ মাসুদ।
এদের মধ্যে তানভীর হাসান ছোট মনির, অনুপম শাহাজান জয়, জামিলুর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, আনন্দ মোহন, আমিনুর রহমান ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিতে নিহত মারুফ ও ইমন হত্যা মামলার আসামী।
উক্ত নেতাদের আত্মীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা তাদের ভারতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানিয়েছেন এরা সিলেট, কুমিল্লা ও উত্তরবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ত্যাগ করেছেন।
দালালের মাধ্যমে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে তারা সীমান্ত অতিক্রম করেছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
আসামীদের গ্রেপ্তার দাবি –
এদিকে বিভিন্ন মামলায় কয়েকশ আওয়ামী লীগ নেতার নাম উল্লেখ থাকলেও গ্রেপ্তার হয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গত আগস্টের আন্দোলনের সংগঠকরা।
টাঙ্গাইলের এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী আল আমিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা আত্মগোপন করেছে।
এদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোড়ালো পদক্ষেপ চাই।
কেউ কেউ ভারতে চলে গেছে। যাদের সহায়তায় তারা সীমান্ত অতিক্রম করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জাতি এ মূহুর্তে তাদের বিচার চাইছে।
আসামীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হবে।