নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন ফিরে পেয়েছিল বড়াল নদ। এখন ফের শুকিয়ে যাচ্ছে নদটি। প্রতিদিনই কমছে পানি। জেগে উঠছে চর।
বাড়ছে চরের বিস্তৃতিও। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও খানিকটা বিস্তৃতি। অথচ একসময় সারা বছরই ভরা যৌবন ছিল এই বড়াল নদের। বাগাতিপাড়া উপজেলাটি বড়াল নদের মাধ্যমে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।
বড়াল নদের উৎপত্তি পদ্মা নদীর রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলায়। বড়াল নদের দৈর্ঘ্য ২২০ কিলোমিটার। এটি রাজশাহীর চারঘাট, নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, লালপুর, বড়াইগ্রাম, নাটোর সদর, গুরুদাসপুর হয়ে পাবনা জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশে গেছে। এক সময় এ নদ ছিল নৌ যোগাযোগের প্রধান পথ।
বর্ষা মৌসুমে সীমিত আকারে নদের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল আনা-নেওয়া করা হলেও শুকনা মৌসুমে নদে পানি কমে যাওয়ায় যোগাযোগের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।একসময় এই নদে অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন নদ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ পাওয়া যায় না। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় মাস তিনেক ঠিকঠাকমতো পানি থাকে বড়ালে। আর বছরের বাকি সময় পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়।
একসময়
একসময় বড়ালের যৌবন ছিল। যত সৌন্দর্য বড়াল অর্জন করেছিল তা সেই সময় উজাড় করে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বড়ালের আগের অবস্থা আজ আর নেই। যৌবন হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন বড়ালের বুকে চাষ হয় গম-ধানসহ বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
নদের বুকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় চেপে গেছে। ফলে খরস্রোতা বড়াল নদী আজ শুধুই স্মৃতি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়া নদ রক্ষার দাবিও জানিয়েছেন সমাজকর্মীরা। পাশাপাশি নদ রক্ষায় পৃথক বরাদ্দেরও দাবি করেছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রেজাউন্নবী বলেন, ‘পদ্মার মুখে পলি মাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়াল আজ নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদ শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পানি না থাকায় এ নদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে এ নদটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদ একদিন হারিয়ে যাবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শুধু বড়ালের গল্প শুনে আর স্বপ্ন দেখে দিন রাত কাঁটাবে।’